Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:00 pm

জেটি সংকটে বিপাকে বেসরকারি তেল আমদানিকারকরা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটি দিয়ে বেসরকারি তেল আমদানিকারকদের ভোজ্যতেল ও জ্বালানি তেল খালাস হয়। লাইটার জাহাজে করে তা বিভিন্ন গন্তব্য ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিবহন করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তেলবাহী জাহাজের ধাক্কায় ৫ নম্বর ডলফিন জেটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ৬ নম্বর ডলফিন জেটি গত জুন মাস থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় তেল খালাস কার্যক্রম বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে পরিশোধিত তেল খালাস নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ফলে বিপিসির আমদানিকৃত জ্বালানি তেল দ্রুত খালাসে বন্দর কর্তৃপক্ষের জেটি (ডলফিন-৪) ব্যবহারের অনুমতি দেয়। একটি মাত্র জেটি দিয়ে সব ধরনের তেল খালাস করার ফলে বেসরকারি খাতের ভোজ্যতেল ও জ্বালানি তেল আমদানিকারকদের তেল পরিবহনে দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এ কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সেরকারি উদ্যোক্তাদের।

বিপিসি ও বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটির মালিকানাধীন তিনটি ডলফিন জেটির দুটি ব্যবহার অনুপযোগী। এর মধ্যে গত জুলাই থেকে পদ্মা অয়েলের জেটিতে (ডলফিন-৬) বিদেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং বন্ধ রয়েছে। আর ৩০ সেপ্টেম্বর মেঘনা পেট্রোলিয়ামের জেটিটি (ডলফিন-৫) এমটি গ্র্যান্ড এইচ-৮ নামে ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজ জেটিতে নোঙর করছিল। বার্থিং করার সময় জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জেটিতে জোরে ধাক্কা দেয়। এ দুর্ঘটনায় ৫ নম্বর ডলফিন জেটির চারটি পিলার, জাহাজ নোঙর করার ফেন্ডার ও জেটির স্টিলের কাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সঙ্গে জেটিতে জ্বালানি তেলের পাইপলাইন নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছে। অন্যদিকে ইস্টার্ন রিফাইনারির জেটিটি (ডলফিন-৭) ক্রুড অয়েল খালাসে ব্যবহার করা হলেও পরিশোধিত জ্বালানি খালাসের সুযোগ নেই। এতে আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি খালাসে বিপাকে পড়েছে বিপিসি। পরে আমদানিকৃত পরিশোধিত তেলের জাহাজ খালাসের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের জেটি (ডলফিন-৪) ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়।

বেসরকারি খাতের ভোজ্যতেল ও জ্বালানি তেল আমদানিকাররা বলেন, ডলফিন জেটি ৫ ও ৬ বন্ধ থাকায় ডলফিন জেটি ৩ ও ৪ দিয়ে বিপিসির জ্বালানি তেলবাহী জাহাজগুলো জরুরি ভিত্তিতে তেল খালাস করছে। এতে বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের ভোজ্যতেল, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও ইউনিলিভারের আমদানিকৃত ভোজ্যতেল এবং ওরিয়ন গ্রুপের আমদানিকৃত জ্বালানি তেল নিয়ে ওরিয়ন এক্সপ্রেস, দেশ এনার্জি, মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার ও কনফিডেন্স পাওয়ারের ফার্নেস ও ডিজেলবাহী জাহাজ তেল খালাসে অপেক্ষায় রয়েছে। আর সময় মতো খালাস করতে না পারায় জাহাজপ্রতি ২০ থেকে ৩০ লাখ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে নোঙরের অনুমতি পাওয়া গেলেও জেটি দিয়ে তেল সরবরাহ দেয়া যাচ্ছে না। ফলে লাইটারেজ জাহাজগুলোকে তেল পরিবহনে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে একদিকে তেলের দাম বাড়বে, অন্যদিকে জ্বালানি বা ভোজ্যতেলের সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা আছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ডলফিন জেটি ৫ ও ৬ ব্যবহার অনুপযোগী থাকায় বিপিসি’র ডলফিন জেটি-৪ ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে পাশে একটি লাইটার জেটিও আছে। আর এ জেটিতে ড্রাপট কম। সাধারণত এ জেটি দিয়ে সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়। বিপিসি’র আমদানি বেশি হওয়ায় সাধারণ আমদানিকারকের জাহাজ নোঙর করতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে বেসরকারি আমদানিকারকদের বার্থিং আবেদন থাকলে আমরা দ্রুত সময়ে বার্থিং শিডিউল দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আবেদন করেনি।

এ বিষয়ে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান বলেন, আমাদের জ্বালানি তেল খালাস ডলফিন জেটি ৫ ও ৭ দিয়ে খালাস হচ্ছে। তবে ডলফিন জেটি চারও ব্যবহার হচ্ছে। তবে সীমিত আকারে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জেটি-৫-এর জন্য আমরা ১৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি। আশা করছি তাড়াতাড়ি সমাধান হবে। যদিও তারা আমাদের ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছে। অন্যদিকে ডলফিন জেটি-৬ দ্রুত সময়ে রিপেয়ারিং কাজ শুরু হবে।