নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: এক বছরের ব্যবধানে উড়োজাহাজে ব্যবহƒত জ্বালানির দাম লিটারে ৩১ টাকা কমে লেনদেন হচ্ছে ৯৯ টাকায়। যদিও এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছিল ৮৪ টাকা। গত সেপ্টেম্বরে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য ছিল ৪৬ টাকা। কভিড মহামারির সময় থেকে বর্তমান সময় জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি পায় ১১৫ শতাংশ।
জানা যায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি গত বছরের ৭ জুলাই অভ্যন্তরীণ রুটে জেট ফুয়েলের মূল্য ১১১ টাকা থেকে ১৯ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩০ টাকা। আর আন্তর্জাতিক রুটে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য ১ ডলার ৯ সেন্ট থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ ডলার ২২ সেন্ট। যদিও গত বছরের নভেম্বরে ৫ টাকা কমিয়ে ১২৫ টাকা, ডিসেম্বরে আরও কমে হয় ১২১ টাকা। এরপর জানুয়ারিতে দাম আরও কিছুটা কমিয়ে ১১২ টাকা করা হয়েছিল। সর্বশেষ গত মাসের ১৩ জুন প্রতি লিটারের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৯ টাকা।
জেট ফুয়েলের মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রতি লিটারের নির্ধারিত মূল্য ছিল ৪৬ টাকা। এরপর ডিসেম্বরে ছিল ৪৮ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দাম বাড়িয়ে করা হয় ৫৩ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ৫৫, মার্চে ৬০ এবং এপ্রিলে ৬১ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। মে মাসে লিটারে ১ টাকা দাম কমানো হয়েছিল। জুনে আবার ৩ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৬৩ টাকা। জুলাইয়ে ৬৬, আগস্টে ৬৭, অক্টোবরে ৭০ এবং নভেম্বরে ৭৭ টাকা করা হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দুই দফায় কমানো হয়েছিল ৪ টাকা। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দুই দফায় ১৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল জেট ফুয়েলের দাম। আর এপ্রিলে ১০০ টাকা। সর্বশেষ গত ৭ জুলাইয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩০ টাকা। এভাবে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের এভিয়েশন ব্যবসাকে অস্থির করে তুলছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) এ অবস্থায় গত ৬ নভেম্বর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে চিঠি দেয়। এ চিঠিতে বলা হয়, দেশে পদ্মা অয়েল জেট ফুয়েলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক বেশি রাখছে। ফলে এভিয়েশন খাত অস্তিত্বের সংকটে। পদ্মা অয়েলের মনোপলি ব্যবসার বিকল্প হিসেবে সংগঠনটি তিনটি প্রস্তাব দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে। প্রস্তাবগুলো হলো দেশীয় প্রাইভেট সেক্টর এয়ারলাইনসের এবং হেলিকপ্টার অপারেটরদের জন্য সরাসরি পারটেক্স পেট্রোলিয়াম থেকে জ্বালানি কেনার অনুমোদন। প্রয়োজনে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিদেশ থেকে জেট ফুয়েল আমদানির অনুমোদন প্রদান এবং অভ্যন্তরীণ জ্বালানি মূল্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জ্বালানির মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা।
এভিয়েশন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের দেড় কোটি নাগরিক বিদেশে থাকে। সঙ্গে চিকিৎসা, হজযাত্রী, পর্যটন খাতে বছরের গড়ে ১৫ লাখ যাত্রী বিদেশ ভ্রমণে যায়। এ কারণে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো আগ্রহী বাংলাদেশকে ঘিরে। এসব বিদেশি উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো কম দামে জেট ফুয়েল পাওয়ায় স্থানীয় উড়োজাহাজ শিল্পকে বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গত ২০ বছরের পাঁচটি দেশীয় এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হলো রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এরই মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে অস্থির হয়ে ওঠে জ্বালানি তেলের বাজার। এখন অনেকটা স্থির। অথচ জেট ফুয়েলের দাম দেশে অনেক বেশি। যদিও একটি উড়োজাহাজের পরিচালন ব্যয়ের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ জ্বালানিতে ব্যয় হয়। ফলে অনিবার্যভাবে উড়োজাহাজ ভ্রমণ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, কভিডকালীন সারা পৃথিবীর সব এয়ারলাইনস চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর দফায় দফায় জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি করে এভিয়েশন খাতকেই হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে জেট ফুয়েল সেল হয়েছিল। যদিও এখন লিটার ৯৯ টাকা; যা আন্তর্জাতিক বাজারের দামের চেয়েও বেশি। এটা আরও কমাতে হবে।
অপরদিকে বিপিসির কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বাড়লে আমাদের কিছুই করার নেই।