সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের আকাশপথে ভ্রমণে আকাশযানে ব্যবহƒত জেট ফুয়েলের ব্যবহার বাড়ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের দেশে জেট ফুয়েল বিক্রয় হয়েছে চার লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চার লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। অন্যদিকে সাগরপথে পণ্য আনা ও নেয়ায় ব্যবহƒত মাদার ভেসেলের জ্বালানি মেরিন ফুয়েলের ব্যবহার কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের মেরিন ফুয়েলের ব্যবহার হয়েছে ৩১ হাজার ২৯২ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা যায়, দেশে বছরে প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই এককভাবে বিপিসি সরবরাহ করে। এর মধ্যে দেশের আকাশপথে ভ্রমণে আকাশযানে ব্যবহƒত জেট ফুয়েলের ব্যবহার বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে জেট ফুয়েল বিক্রয় বেড়েছে ৪৩ হাজার মেট্রিক টন। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরের জেট ফুয়েলের বিক্রয় হয়েছিল মাত্র দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৪ মেট্রিক টন। অন্যদিকে, সাগরপথে পণ্য আনা ও নেয়ায় ব্যবহƒত মাদার ভেসেলের জ্বালানি মেরিন ফুয়েলের ব্যবহার কমছে। এক বছরের ব্যবধানে মেরিন ফুয়েলের বিক্রয় কমেছে ১৩ হাজার ৯১৭ মেট্রিক টন। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরের বিক্রয় হয়েছিল ১৩ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন।
বিপিসির বিক্রয় বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, করোনার সময় বিমানের জেট ফুয়েল বিক্রয় ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তখন আমাদের বিভিন্ন ডিপোগুলোয় বিপুল পরিমাণে জেট ফুয়েল দীর্ঘদিন ধরে মজুত ছিল। পরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলে উড়োজাহাজে জেট ফুয়েলের চাহিদা বেড়ে যায়। প্রতিবছর জেট ফুয়েলের বিক্রয় বাড়ছে। অন্যদিকে, সমুদ্রপথে চলাচলকারী দেশি ও বিদেশি বড় বড় মাদার ভেসেলগুলোয় ব্যবহƒত মেরিন ফুয়েলের বিক্রয় কমছে। মূলত চাহিদা না থাকায় মেরিন ফুয়েলের বিক্রয় কম। যদিও গত তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক মানের মেরিন ফুয়েল দেশে বিক্রয় হচ্ছে। তবু জাহাজগুলোর এ জ্বালানি কেনায় অনাগ্রহ দেখা যায়।
দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যিক কার্যক্রম, শিপিং ও জাহাজ পরিচালনায় জড়িত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা শেয়ার বিজকে বলেন, দেশে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় সাড়ে চার হাজার বড় মাদার ভেসেল পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করে। আর পুরো বাংলাদেশে প্রায় ছয় হাজার সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল করে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে মেরিন ফুয়েল ক্রয় করে না। আন্তর্জাতিক মান ও দামে মেরিন ফুয়েল নিশ্চিত করা গেলে উড়োজাহাজের চেয়ে জাহাজের মেরিন ফুয়েল বেশি বিক্রয় হতো। ইউএস বাংলার জিএম কামরুল ইসলাম বলেন, কভিডকালে ৫০ শতাংশের মতো যাত্রী কমে গিয়েছিল, তখন জ্বালানি তেল বিক্রয়ও কমেছিল। এখন যাত্রী বেশি, তাই ফ্লাইটও বেশি পরিচালনা করতে হয়। ফলে জেট ফুয়েলের ব্যবহার বাড়ছে, যা আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) খালিদ আহম্মেদের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বিপিসি দেশের কৃষি উৎপাদন, শিল্প প্রক্রিয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, গৃহস্থালি ও অন্যান্য কাজে জ্বালানি চাহিদার জোগান এককভাবে নিশ্চিত করে। গত অর্থবছরে বিপিসির মোট জ্বালানি তেল বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড।