শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনের টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড দেশটির শীর্ষস্থানীয় জেডি ই-কমার্সে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। কভিড-১৯-এর নতুন ধরনে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে খবরটি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আনন্দের বলে মনে করা হচ্ছে। খবর: ব্ল–মবার্গ।
এ বিনিয়োগের খবরে চীনের ই-কমার্সে সুবাতাস বইছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বেইজিংয়ে খড়্গ নেমে আসার পর এ খবর নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।
এই অপ্রত্যাশিত বিনিয়োগে চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন খুচরা বিক্রেতা তাদের সেবার পরিধি বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে। গত কয়েক মাসে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি চীন সরকারের বিরূপ আচরণ লক্ষ করা গেছে। সরকারের শ্যেন দৃষ্টিতে পড়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। এর কারণ হিসেবে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আলিবাবা ও টেনসেন্ট। মার্কিন টেক জায়ান্টগুলোর মতো চীনা টেক জায়ান্টগুলোও ক্ষুদ্র প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্ভাবনা নষ্ট করে দিচ্ছে। এ কারণে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর লাগাম টেনে ধরার চেষ্টার পেছনের কারণ বুঝতে বেগ পেতে হয় না। বিশেষজ্ঞরা এমনই বলছেন।
তাই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বিঘœ না করে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যায় দেশটির বেশিরভাগ বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। অনেক প্রযুক্তি সংস্থা মানুষকে ট্র্যাক করতে সরকারকে সহায়তাও করে থাকে। তারপরও প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা ও প্রভাবকে হুমকি হিসেবে দেখছে চীনা সরকার।
এত সমস্যা সত্ত্বেও টেনসেন্টের এ বিনিয়োগ হয়তো সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, গতকাল টেনসেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন লাউ জেডির সঙ্গে বোর্ড মিটিং করেন। টেনসেন্ট এর আগে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান পিনডুয়োডুয়ো ইনকরপোরেশন, রাইড শেয়ারিং জায়ান্ট ডিডি গ্লোবাল ইনকরপোরেশন, খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেইটুয়ান প্রভৃতিতে বিনিয়োগ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিজ খাতে একচেটিয়া দাপট দেখিয়ে চলেছে। বোর্ড মিটিংয়ে এসব বিষয়ের ওপর কথা বলে টেনসেন্ট প্রেসিডেন্ট। তাদের তৈরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাট যে এরই মধ্যে শীর্ষস্থানীয় প্ল্যাটফর্ম হয়েছে, তাও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে জেডিতে বিনিয়োগের খবরে হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর সাত শতাংশ বেড়ে যায়। টেনসেন্টের এক ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, এরপরও তারা জেডি পোর্টফোলিও যাচাই-বাছাই করে দেখবে। মেইটুয়ান কিংবা কোয়াইশুয়ের মতো জেডির শেয়ারদর কেমন হয়, তা পর্যালোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
হংকং স্টক এক্সচেঞ্জ জানায়, টেনসেন্ট তাদের ৪৫ কোটি ৭৩ লাখ শেয়ার জেডির কাছে ছেড়ে দেবে, শতাংশের হিসেবে যা ৮৬ দশমিক চার শতাংশ।
টেনসেন্ট কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে, পুঁজিবাজারে উত্থানের মধ্য দিয়ে জেডি ডট কম সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে গেছে। তবু তারা উপযুক্ত সময় দেখে বিনিয়োগ ট্রান্সফার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি পারস্পরিক বাণিজ্য সুবিধা বাড়াবে। এতে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও মজবুত হবে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পাশাপাশি টেনসেন্ট করপোরেট সোশ্যাল প্রোগ্রামের আওতায় এক হাজার ৫৭ কোটি ডলার খরচ করার ঘোষণা দিয়েছে।
টেনসেন্টের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যাক মায়ের আলিবাবা। এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের রোষানলে রয়েছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে টেনসেন্ট তার উইচ্যাটে আলিবাবার টিমল ও তাওবাও শপিং সাইট প্রদর্শনের সুযোগ করে দেবে বলে জানিয়েছে ব্ল–মবার্গ।
ব্লুমবার্গের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ম্যাথিউ ক্যান্টারম্যান বলেন, অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়াবে টেনসেন্ট। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করবে টেনসেন্ট। একই সময় চীনের বাইরেও বিনিয়োগ বাড়াবে টেনসেন্ট।
টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। এটি চীনের বহুজাতিক সংস্থা। এর অধীন ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট পণ্য ও সেবা, বিনোদন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। টেনসেন্ট বিশ্বের বৃহত্তম ভিডিও গেম
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থা ও বিনিয়োগ করপোরেশনগুলোর অন্যতম এটি।