নিজস্ব প্রতিবেদক: দরপতন অব্যাহত দেশের পুঁজিবাজারে। আর এ বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা। পতনমুখী বাজারে তাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উত্থান ও পতনমুখী বাজারে জেড ক্যাটেগরির শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। তবে গত এক বছরের মধ্যে জেড ক্যাটেগরির বেশ কয়েকটি শেয়ারদর প্রায় ৪০০ শতাংশও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব শেয়ারে স্বল্প সময়ে বেশি মুনাফা অর্জনের আশায় অনেকেই বিনিয়োগ করেছে। আর বর্তমান বাজারে এসব শেয়ারের দরও নিম্নমুখী স্রোতে চলছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ওইসব শেয়ারধারী বিনিয়োগকারীরা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আব্বাস উদ্দিন। তিনি চাকরির পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। তিনি বলেন, গত বছর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কে অ্যান্ড কিউ লিমিটেডের শেয়ার ১৪০ টাকা দরে কিনেছি। গত মার্চে শেয়ারটি সর্বোচ্চ দরে বেচাকেনা হলেও বেশি মুনাফার আশায় বিক্রি করিনি। কিন্তু যে দরে কিনেছি টানা পতনের কারণে গতকাল সেই দরে নেমে এসেছে। এর পরও পতন হলে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন শেয়ার ধরে রাখব নাকি বিক্রি করে বের হয়ে যাব, বুঝতে পারছি না।
তিনি বলেন, বাজার দীর্ঘদিন মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ কোনো স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে আশার বাণী শোনা যাচ্ছে না। তাই বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে দায়িত্বশীলদের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।
শেয়ারদর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারির প্রথম দিন কে অ্যান্ড কিউর শেয়ার ৩৪ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। ওই বছর আগস্টের শেষ দিন কোম্পানির শেয়ারদর সর্বোচ্চ ১৫৮ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ আট মাসের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ার সর্বোচ্চ ৩৬৭ শতাংশ বেড়েছে। গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ার সর্বোচ্চ ১৬৯ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এর পর থেকে কোম্পানির দরপতন শুরু হয়েছে। গতকাল কোম্পানির শেয়ারদর ১৩৮ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১৪২ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। তবে সর্বশেষ ১৪০ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
সাভার রিফ্রেক্টরিজের শেয়ার ২০১৭ সালের জানুয়ারির প্রথম দিন ৫০ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ার সর্বোচ্চ ১৯৮ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এর পর থেকে কোম্পানির শেয়ারদর পতন শুরু হয়েছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার ২৯৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত কয়েক দিনের পতনে গতকাল কোম্পানির শেয়ার ১৫৩ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
শুধু কে অ্যান্ড কিউ এবং সাভার রিফ্রেক্টরিজের শেয়ারদরই নয়, জেড ক্যাটেগরির অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারে একই অবস্থা বিরাজ করছে। এসব শেয়ারে যারা বিনিয়োগ করেছে তারা বর্তমানে আতঙ্কে রয়েছে। পতন ধারা অব্যাহত থাকলে এসব শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, উত্থান ও পতনমুখী বাজারে কিছু জাঙ্ক শেয়ারের দর বাড়ে। তবে গত এক বছরে জেড ক্যাটেগরির কিছু শেয়ারের দর টানা বাড়তে দেখা গেছে। এসব শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়েছে। একদিকে লোকসান অন্যদিকে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ এমন কোম্পানির শেয়ার যদি অতিমূল্যায়িত হয় তাহলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তো থাকবেই। তাছাড়া অতি মুনাফার তাগিদে কেউ যদি এসব শেয়ার ধরে রাখে তাহলেও তাদেরও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তাই বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তারা।
এ সম্পর্কে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারে বিনিয়োগ করে দুই ধরনের গেইন করে বিনিয়োগকারীরা। যদি কোনো ধরনের গেইন না হয় তাহলে তো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই বুঝে-শুনে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পনিগুলোর মধ্যে ৪৩টি জেড ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। এসব কোম্পানি নিয়মিত লভ্যাংশ দিতে ও এজিএম করতে ব্যর্থ। তাছাড়া বেশ কিছু কোম্পানির উৎপাদনও নেই।