মো. আসাদুজ্জামান নূর: আবার পুঁজিবাজারের পতন দেখলেন বিনিয়োগকারীরা। গতকালের পুঁজিবাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিক্রয় প্রবণতা ছিল। বাজারে বিক্রেতারা বেশি সক্রিয় ছিলেন। সেই তুলনায় ক্রেতারা কম সক্রিয় ছিলেন। এ কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় লেনদেন।
গতকাল বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল আইটি ও ওষুধ খাত। এ দুই খাতে গতকাল ক্রয় চাপ বেশি ছিল। অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সেবা ও রিয়েল এস্টেট খাতে বিক্রয় চাপ বেশি দেখা গেছে। এরই সঙ্গে গতকাল খাদ্য খাতে শূন্য দশমিক ১২১ শতাংশ বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে আগের কার্যদিবসের মতো গতকালও ‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ার কেনায় আগ্রহী ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বেশ ‘ক্রয় চাপ’ ছিল ‘বি’ ক্যাটেগরিতে। অন্যদিকে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারে আস্থা রাখতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। গতকালও ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন তারা। এতে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারে বিক্রয় চাপ দেখা গেছে। এর প্রভাবে গতকাল ডিএসইর সূচক ৫৬ দশমিক দুই পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের চেয়েও কম হয়েছে। গতকাল লেনদেন হয় এক হাজার ৭৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ১৪৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেলেও আগের কার্যদিবসের মতো গতকালও লেনদেনে সর্বোচ্চ অবদান রাখে বস্ত্র খাত। এ খাতের সর্বোচ্চ ৪৬টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে, বেড়েছে ছয়টির ও অপরিবর্তিত ছিল ছয়টির। ১৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ অবদান রাখার মাধ্যমে গতকাল এ খাতের লেনদেন হয় ১৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে এ খাতের লেনদেন হয়েছিল ১৭৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা গতকালের চেয়ে বেশি ছিল।
গতকাল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয় ব্যাংক খাতে। ১৪৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে এ খাতের অবদান ছিল ১৫ দশমিক এক শতাংশ। ১৪টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পাওয়ার বিপরীতে ৯টি করে কোম্পানির শেয়ার বাড়ে এবং অপরিবর্তিত থাকতে দেখা যায়। এ খাতেও আগের কার্যদিবসের চেয়ে লেনদেন কম হয়েছে। আগের কার্যদিবস রোববারে এ খাতের লেনদেন ছিল ১৫৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের লেনদেন ছিল ১৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে এ খাতের লেনদেন কম হয়েছিল। সেদিন ৯৯ কোটি ২০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেতে দেখা গেছে। ১৮টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে, বেড়েছে ১১টির ও অপরিবর্তিত ছিল একটির।
লেনদেনে চতুর্থ অবস্থানে থাকা বিবিধ খাতের লেনদেন হয় ১০০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ অবদান রাখা এ খাতের লেনদেন আগের কার্যদিবসে সর্বোচ্চ ২৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ছিল। এ খাতের ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে ও বেড়েছে মাত্র তিনটির।
পঞ্চম অবস্থানে ছিল আইটি খাত। এ খাতের লেনদেন ছিল ৬৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে ২৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল। গতকাল সাতটি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পায়, আর দর বাড়ে চারটি কোম্পানির। এছাড়া গতকাল লেনদেনে প্রকৌশল পাঁচ দশমিক ৯৩ শতাংশ, খাদ্য পাঁচ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ, জ্বালানি চার দশমিক ৩১ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান তিন দশমিক ৬০ শতাংশ অবদান রাখে।
গতকাল লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৭৬টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৫৫টির, কমেছে ২৯৫টির ও অপরিবর্তিত ছিল ২৬টির। এর প্রভাবে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৬ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ছয় হাজার ৭৯৯, শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ছয় পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে এক হাজার ৪৩৭ এবং বিশেষ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে দুই হাজার ৫৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে।