জেনারেল ইলেকট্রিক করপোরেশন

২০০৯ সাল থেকে পেশাভিত্তিক সেবায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউজকুপারস (পিডব্লিউসি) বিশ্বের প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাজার মূলধন হিসেবে সেরা ১০০টির তালিকা তৈরি করে আসছে। জরিপে স্পষ্টভাবে কিছু নির্দিষ্ট কোম্পানি, রাষ্ট্র ও খাতের প্রবণতা এবং উন্নয়ন চিহ্নিত করেছে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। শেয়ার বিজ পাঠকদের জন্য ধারাবাহিক আয়োজন। আজ থাকছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক করপোরেশনের কথা

মিজানুর রহমান শেলী : জেনালের ইলেকট্রিক করপোরেশন। নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে টমাস আলভা এডিসনের নাম। ১৮৮৯ সালের কথা। সে সময় টমাস এডিসন বিদ্যুৎচালিত বহুমুখী ব্যবসায় আগ্রহী ছিলেন। তার কয়েকটি কোম্পানি ছিল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- এডিসন ল্যাম্প কোম্পানি, এডিসন মেশিন ওয়ার্ক, ইলেকট্রিক মোটরস, বার্গম্যান অ্যান্ড কোম্পানি, এডিসন ইলেকট্রিক লাইট কোম্পানি। এ কোম্পানিগুলোর পেটেন্ট ছিল। অন্যদিকে, এডিসনের লাইটিং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অর্থায়ন করতো জেপি মর্গান ও ভ্যান্ডারবিল্ট পরিবার। ওই বছর অ্যান্থনি জে. ড্রেক্সিলের গড়া ড্রেক্সিল কোম্পানি এবং জেপি মর্গানের গড়া মর্গান অ্যান্ড করপোরেশন কোম্পানি দুটি এডিসনের গবেষণা কাজে অর্থ জোগান দেয়। এমনকি এডিসনের কোম্পানিগুলো এডিসন জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানির আওতায় একীভূত করার কাজেও তারা লগ্নি করেন। এ একই সময় চার্লস কফিনের ছিল থমসন-হাটসন ইলেকট্রিক কোম্পানি। তিনি প্রতিযোগী অনেক কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করে বেশ আয় করছিলেন। তার সাড়াও পড়েছিল ভালোমতো। তখন ড্রেক্সির ও মর্গানের সহায়তায় চার্লস কফিন এডিসনের এডিসন জেনারেল ইলিকট্রিককে তার কোম্পানির সঙ্গে একীভূত করতে সক্ষম হন। পরে এ কোম্পানির নাম হয় জেনারেল ইলেকট্রিক। অবশ্য তারা টমাসের পেটেন্টও কিনে নেন। সেই ১৮৯২ সাল থেকেই জেনারেল ইলেকট্রিকের যাত্রা শুরু।
বর্তমানে জেনারেল ইলেকট্রিক যুক্তরাষ্ট্রে একটি বহুজাতিক কংগ্লোমারেট করপোরেশন। বিদ্যুৎ ও পানি, তেল ও গ্যাস, এভিয়েশন, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন ও পুঁজি বাজার এ কয়েকটি বিভাগে কাজ করে। ম্যাসাচুসেটস এর বোস্টনে এর হেড কোয়ার্টার অবস্থিত।
পিডব্লিউসির গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৯ সালে জিই’র বাজার মূলধন ছিল ১০৭ বিলিয়ন ডলার। তখন বাজার মূলধনের হিসাবে সেরা ১০০ কোম্পানির মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ছিল ২৪। ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তাদের বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯৫ বিলিয়ন ডলার। ফলে বর্তমানে কোম্পানিটির সেরা ১০০ র্যাংকিংয়ে অবস্থান দাঁড়িয়েছে আট। অর্থাৎ তারা ১৬ ধাপ উন্নীত হতে সক্ষম হয়েছে।
২০১১ সালে কোম্পানিটি ফরচুন ৫০০ এর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ৬৮তম বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি অর্জন করে। এ হিসাবটি ছিল তাদের মোট রাজস্বের ভিত্তিতে। তাছাড়া ওই একই গবেষণায় কোম্পানিটিকে লভ্যাংশের হিসেবে ১৪তম স্থানে তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০১২ সালে ফোর্বস গ্লোবালের গবেষণা প্রতিবেদনে কোম্পানিটি বিশ্বের সেরা চারে জায়গা করে নেয়। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, এ কোম্পানির দু’জন কর্মকর্তা ইর্ভিং ল্যাংমুইর ও ইবার গিয়াইবার যথাক্রমে ১৯৩২ ও ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
এ পাবলিক কোম্পানিটি ১২৪ বছর আগে, ১৮৯২ সালের ১৫ এপ্রিল তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয়। থমাস এডিসন, চার্লস কফিন, ইলিহু থমসন, এডুইন হাউসটন এ ক’জনের হাত ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা করে। জেফরি আর, ইমেল্ট এখন এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৫ সালের হিসাবমতে- এয়ারক্রাফ্ট ইঞ্জিন, যন্ত্রাংশ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, বৈদ্যুতিক মোটর, বিদ্যুৎ, ফাইন্যান্স, গ্যাস, স্বাস্থ্য, লাইটিং, লোকোমটিভস, তেল, সফ্টরয়্যার, পানি, অস্ত্র, উইন্ড টারবাইনসহ বিভিন্ন ব্যবসায় তারা মোট ১৪০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে। তাদের পরিচালন আয় ছিল আট দশমিক ১৮৬ বিলিয়ন ডলার। নিট আয় ছিল ছয় দশমিক ১২৬ বিলিয়ন ডলার। তাদের সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ, ৪৯৩ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। ইকুয়িটির মোট পরিমাণ, ৯৮ দশমিক ৩০০ বিলিয়ন ডলার। বর্তামনে কোম্পানিটিতে ৩ লাখ পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে কাজ করছেন। ‘ইমাজিনেশন অ্যাট ওয়ার্ক’ এ সেøাগান নিয়ে তারা পৃথিবীতে ১২৪ বছর অবধি ব্যবসা করে চলেছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০