নিজস্ব প্রতিবেদক: নারীর উন্নয়ন নিশ্চিতে এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জেন্ডার বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিতে মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সমন্বিত ডেটাভিত্তিক পর্যালোচনার ওপর জোর দেন একটি বাজেট-বিষয়ক সংলাপে অংশগ্রহণকারী বক্তারা।
জাতীয় বাজেট সামনে রেখে গতকাল সোমবার ঢাকার কারওয়ানবাজারে প্রগতি ইন্স্যুরেন্স ভবনে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
আলোচনায় আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। জাতীয় বাজেটেও জেন্ডার বাজেটের বরাদ্দ রয়েছে বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সেই বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়নে বাজেট কাঠামোতে পরিবর্তন প্রয়োজন। কোন মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বাল্যবিয়ে এবং সহিংসতা প্রতিরোধে কত শতাংশ বাজেট ব্যয় হচ্ছে, তার সমন্বিত ডেটা সংগ্রহ এবং তা পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ভ‚মিকা পালনে সক্ষমতা প্রয়োজন।
সম্প্রতি প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও সিপিডি যৌথভাবে ‘বাজেট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যানালাইসিস অন চ্যালেঞ্জিং ফিয়ার অব ভায়োলেন্স’ শীর্ষক একটি বাজেট ফ্রেমওয়ার্ক বিশ্লেষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আয়োজনের শুরুতে এই প্রতিবেদনের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট নাদিয়া নওরিন। তিনি তার উপস্থাপনায় বলেন, এসডিজি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রভ‚ত উন্নতি হলেও নারীর প্রতি সহিংসতা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন সহিংসতা প্রতিরোধে যে আইন রয়েছে, তার সঠিক প্রয়োগ এবং একইসঙ্গে বাজেটে সহিংসতা রোধে বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। যদিও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে, কিন্তু তা সুনির্দিষ্ট নয়। এই বরাদ্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট। বাংলাদেশে জেন্ডার বাজেটের যে কাঠামো রয়েছে, তা নারীদের প্রতি সহিংসতার ভয় প্রতিরোধে কার্যকর হচ্ছে না, তাই এই কাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন। সহিংসতার ভয় প্রতিরোধে বাজেট কাঠামোর চারটি স্তম্ভের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারী বিষয়ে বিভাজিত তথ্য অত্যন্ত গুরুত্ত¡পূর্ণ। এছাড়া বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আলোচনার ওপরে গুরুত্ব দেন তিনি। উপস্থাপনার শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, নারীদের ভেতরে সহিংসতার ভয় থাকলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে যাবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা আরও বলেন, সহিংসতার প্রভাব শুধু সহিংসতার শিকার ব্যক্তির ওপরই পড়ে তা নয়, বরং জাতীয় অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে আরও যেসব বিষয়ের দিকে জোর দিতে হবে, সেগুলো হলোÑসহিংসতা থেকে সুরক্ষা ও প্রতিকার, গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত এবং প্রশাসনসহ জনগণের মাঝে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ করা।
সংলাপে অংশ নেন সংসদ সদস্য আরোমা দত্ত, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক (গার্লস রাইটস) কাশফিয়া ফিরোজ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সীমা মোসলেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিজ অ্যান্ড ডাইভারসিটির পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি, ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থার উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম, ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ডা. মানসী সাহা, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজির সহসভাপতি কানিজ ফাতেমা, নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. ফজিলা বানু লিলি প্রমুখ।