Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:17 am

জেমিনি সি ফুডের শেয়ারদর বেড়েছে ৩৫%

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি জেমিনি সি ফুড লিমিটেড গত সপ্তাহে দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, গত সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড় লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৭১ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ টাকার শেয়ার। সপ্তাহ শেষে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ কোটি ৫৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

এদিকে সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে শেয়ারদর ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ বা ৪৯ টাকা ৮০ পয়সা বেড়ে প্রতিটি সর্বশেষ ৭১৪ টাকা ৮০ পয়সায় হাতবদল হয়, যার সমাপনী দরও ছিল একই। দিনভর কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বনি¤œ ৬৯৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭১৪ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়। দিনজুড়ে ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৯টি শেয়ার মোট ১ হাজার ১৫৮ বার হাতবদল হয়, যার বাজারদর ১৫ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর গত এক বছরের মধ্যে শেয়ারদর ২৯৫ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৬৮ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।

এদিকে শেয়ারদর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি জেমিনি সি ফুড লিমিটেডের। সম্প্রতি অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানিটি এমন তথ্য জানায়। কোম্পানিটির শেয়ারদর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৮ মার্চ থেকে কোম্পানিটির ধারাবাহিকভাবে শেয়ারদর বাড়ছে। ওই দিন তাদের শেয়ারদর ছিল ৪৫৬ টাকা ৭০ পয়সা, যা গত ৫ এপ্রিল লেনদেন হয় ৬৬৫ টাকায়। এ হিসেবে মাত্র ছয় কার্যদিবসের ব্যবধানে দর বেড়েছে ২০৮ টাকা ৩০ পয়সা। আর এ দর বাড়াকে অস্বাভাবিক মনে করছে ডিএই। কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে ডিএসই নোটিশ পাঠায়। জবাবে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারদর বাড়ছে বলে জানায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গত ৫ মার্চ জেমিনি সি ফুডের করপোরেট কার্যালয়ে লেংক ফ্রোজেন ফুডস (এশিয়া) কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, জার্মানিভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য কাঁচামাল প্রক্রিয়ার (চিংড়ি) কাজ করবে জেমিনি সি ফুড। মূলত নির্দিষ্ট ক্রয়াদেশের বিপরীতে কাঁচামালকে রপ্তানিযোগ্য করবে এবং এজন্য শতভাগ অগ্রিম অর্থ গ্রহণ করবে জেমিনি। একইসঙ্গে অপ্রচলিত বৈশ্বিক বাজার খুঁজে বের করার লক্ষ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণে উভয় প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করবে। এ চুক্তির ফলে অপ্রচলিত বাজারে ব্যবসার সুযোগ পাবে। এতে জেমিনি সি ফুডের আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব বাড়বে। এছাড়া এটি জেমিনি সি ফুডের ভবিষ্যতের মুনাফায় টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পরিচালন ব্যয়সহ উৎপাদন খরচও কমিয়ে দেবে।

চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২২) শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭ টাকা ১০ পয়সা, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ টাকা ৯৪ পয়সা। অর্থাৎ প্রথমার্ধের হিসাবে শেয়ারপ্রতি আয় ৩ টাকা ১৬ পয়সা বেড়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০২২) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ১ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ২ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ শুধু দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় ৩১ পয়সা বেড়েছে। এছাড়া ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ১৮ পয়সা, যা ২০২২ সালের ৩০ জুনে ছিল ১০ টাকা ৭ পয়সা। প্রথমার্ধে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে ৭ টাকা ৮১ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৪ পয়সা (ঘাটতি)।

সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানিটি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ ও ৩০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। আলোচিত হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১২ টাকা ৪৯ পয়সা এবং ৩০ জুনে শেয়ারপ্রতি নেট সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ১০ পয়সা। আর আলোচিত হিসাববছরে শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে ২৫ টাকা ৭৯ পয়সা (ঘাটতি)। এর আগের বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের মাত্র পাঁচ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সে সময়ে তাদের ইপিএস হয়েছিল ৭২ পয়সা আর ৩০ জুন ২০২১ শেয়ারপ্রতি নেট সম্পদমূল্য (এনএভি) ছিল ৯৩ পয়সা।

উল্লেখ্য, জেমিনি সি ফুড লিমিটেড ১৯৮৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন করছে। তাদের অনুমোদিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ছয় কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কোম্পানির মোট ৬১ লাখ পাঁচ হাজার ২০৬টি শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩০ দশমিক ০১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ, বিদেশি শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং বাকি ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।