Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 1:01 am

জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি ঘিরে উত্তেজনা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: জেরুজালেম শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর আরব নেতারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এ সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে সহিংসতা শুরু হতে পারে। এদিকে সহিংসতার আশঙ্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। খবর বিবিসি, আলজাজিরা।

বুধবার ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। মার্কিন এ সিদ্ধান্তকে ইসরাইলের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়। তবে ফিলিস্তিন ও আরব নেতারা, এমনকি মার্কিন মিত্র সৌদি আরবও বলেছে, এ ধরনের ঘোষণা মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র যদি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে এর পরিণতি বিপজ্জনক হবে বলে এর আগে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছে জর্ডান।

জেরুজালেম ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা। ব্রিটিশ মন্ত্রী বোরিস জনসন বলেছেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন।

জেরুজালেমকে ইসরাইলি রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার কথা প্রকাশের আগের সন্ধ্যায় জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি, সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু দেনেহ বলেছেন, টেলিফোনে ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়ে ফিলিস্তিনি নেতা বলেছেন, এ ধরনের বিপজ্জনক সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বের ও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

পশ্চিম তীরের জেরুজালেমকে ইসরাইল বরাবরই তাদের রাজধানী দাবি করে এলেও পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর আন্তর্জাতিক মহলও ইসরাইলের এ দাবিকে স্বীকৃতি দেয় না। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম দেশ হতে যাচ্ছে যারা ইসরাইলের এমন দাবিকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। আর এ ঘোষণা স্বাধীন ফিলিস্তিনির সমর্থক আরব আর বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়কে আঘাত করবে বলে মনে করা হয়।

১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের পর জর্ডানের কাছ থেকে জেরুজালেমের দখল নেয় ইসরাইল। আর নিজেদের অবিভাজ্য রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালের ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তিচুক্তিতেও এ শহরের ভবিষ্যৎ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে বলে উল্লেখ ছিল। তবে তা অস্বীকার করে ১৯৬৭ সাল থেকেই অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরাইল। ওই এলাকায় দুই লাখেরও বেশি ইহুদি বসবাস করে। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তা অবৈধ বলে বিবেচনা করা হয়। আর এ কারণেই বিশ্বের সব দেশেরই ইসরাইলি দূতাবাস কখনই ওই শহরে নেওয়া হয়নি। তেল আবিব থেকেই দূতাবাস পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

গতকাল হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়, জেরুজালেমের নির্দিষ্ট বাউন্ডারি অক্ষত থাকবে। পবিত্র তীর্থভূমিগুলোও অক্ষত রাখা হবে। চূড়ান্ত চুক্তিতেই তার ফয়সালা হবে। ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে এই স্বীকৃতি বাস্তবতারই স্বীকৃতি।

জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানালেও হোয়াইট হাউজের ঘোষণায় উল্লেখ করা হয় এটা শেষ হতে কয়েক বছর সময় লাগবে। স্টেট ডিপার্টমেন্টকে এ প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। নতুন নকশা আর নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিবেচনা করে তা নির্মাণ করা হবে।