শেয়ার বিজ ডেস্ক: পবিত্র জেরুজালেম নগরীকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির ঘটনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে তোপের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি দেশটির মিত্র হিসেবে পরিচিত ব্রিটেন ও ফ্রান্সও ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। কার্যত পুরো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এদিকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিবাদে তৃতীয় দিনেও ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবারও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ফিলিস্তিনিদের। এসব সংঘর্ষে দুজন নিহত ও বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। খবর বিবিসি।
নিরাপত্তা পরিষদের অর্ধেকের বেশি সদস্য দেশের আহ্বানে এ জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিষয়টির মীমাংসায় ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে আলোচনার ওপর জোর দেয় ব্রিটেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা থাকায় এ নিয়ে ভোটাভুটির জন্য কোনো প্রস্তাব তোলা হয়নি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রিটেনের স্থায়ী প্রতিনিধি ম্যাথিউ রায়ক্রফট বলেন, ব্রিটিশ দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের কোনো পরিকল্পনা লন্ডনের নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে ব্রিটেন। ফ্রান্সের প্রতিনিধি ফ্রাঁসোয়া ডেলাত্রে বলেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় প্যারিস উদ্বিগ্ন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য আরও ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় মস্কো মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন। রাশিয়া মনে করে, এ ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্য সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করবে।
ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মনসুর ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে মদত দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প যে ঘোষণাই দিক না কেন, জেরুজালেম নগরী ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারীর অবস্থান হারিয়েছে।’
সুইডেনের দূত ওলোফ স্কুগ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সনদ লঙ্ঘন করেছেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত চীন, ইতালি, উরুগুয়ে, সেনেগাল, বলিভিয়া, ইথিওপিয়া, কাজাকিস্তান, ইউক্রেন, জাপান ও ডর্ডানের প্রতিনিধিরাও ট্রাম্পের ঘোষণায় উদ্বেগ জানান।
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়কারী নিকোলাই ম্লাদেনোভ বলেন, ট্রাম্পের এ ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা ব্যাপক আকারে বেড়ে যেতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্যদের অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিরক্ষার বদলে শান্তি নষ্টের চেষ্টা করছে।
নিকি হ্যালির ভাষায়, ‘বহু বছর ধরেই জাতিসংঘ ইসরাইলের প্রতি অসংযতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে এটি বরং ক্ষতি বয়ে এনেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না।’