জৈব বালাইনাশকে সবজির আবাদ

কৃষিনির্ভর জেলা হিসেবে চুয়াডাঙ্গার সুনাম রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে শাকসবজি বিক্রি করে থাকেন এখানকার কৃষক। অর্থাৎ কৃষকরা জেলার অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছেন।
বর্তমানে এখানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা বছরই শাকসবজির চাষ হচ্ছে। জেলায় শুধু শীতকালেই নয়, গ্রীষ্মকালেও প্রচুর সবজির আবাদ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে গ্রীষ্মকালেও প্রায় ২০ থেকে ২৫ ধরনের সবজির চাষ হচ্ছে।
আগে বলা হতোÑবোকার ফসল পোকায় খায়। কৃষকরা এখন আর বোকা নন। তারা নিজেরাও ভালো বোঝেন। পোকা যেন ফসলের ক্ষতি করতে না পারে, সে বিষয়ে তারা সচেতন। এই সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ (জৈব বালাইনাশক) ব্যবহার করে সবজি চাষ করে কৃষক পোকার হাত থেকে রক্ষা করছেন ফসল। এই ট্র্যাপের কারণে ক্ষতিকর বিষ প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। বিষের খরচ থেকে বেঁচে যাচ্ছেন কৃষক। উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। কেননা, বিষমুক্ত সবজির চাহিদা রয়েছে প্রচুর।
আঠারখাদা গ্রামের রবজেলের ছেলে মিষ্টিকুমড়া চাষি ইউনুস আলী জানান, আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগতিায় তিন বিঘা জমিতে জৈবসার ব্যবহার করে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ করেছি। এতে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আশা করি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। একই গ্রামের মরহুম শমসের শেখের ছেলে মিজারুল ইসলাম জানান, চার বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছি। এতে ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আশা করছি ওই কুমড়া বিক্রি হবে ৪০-৫০ হাজার টাকায়। তাদের উৎপাদিত কুমড়া ভালো হওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট থেকে এসে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
জমিতে জৈবসার ব্যবহার করে বেগুনের আবাদ করেছেন আঠারখাদা গ্রামের মরহুম মওলা মণ্ডলের ছেলে দেলোয়ার হোসেন। তিনি আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগতিায় ১০ কাঠা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছেন। তার গাছের বেগুন সপ্তাহের তিন দিন পরপর ১৩০ কেজি করে উঠিয়ে বিক্রি করতে পারবেন। এটা সাত মাস অব্যাহত থাকবে। ১০ কাঠা জমিতে বেগুন আবাদ করতে তার ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার টাকা। উৎপাদিত বেগুন বিক্রি করে তার আয় হবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ঠিক এভাবেই ওই গ্রামের মরহুম মঙ্গল সরদারের ছেলে আবদুল আজিজ বেগুনের আবাদ করেছেন ১২ কাঠায়। মরহুম সবদুল বিশ্বাসের ছেলে মোমিন সাত কাঠা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় জমিতে জৈবসার ব্যবহার করে কাঁচামরিচের আবাদ করেছেন আঠারখাদা গ্রামের মরহুম ইউসুফ মণ্ডলের ছেলে বাবুল মণ্ডল, মরহুম রবজেল মণ্ডলের ছেলে ইউনুস ও মরহুম রহিম শেখের ছেলে বজলেম শেখ।
আলমডাঙ্গা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা শায়খুল ইসলাম জানান, এ উপজেলার ৪৬ ব্লকের ৪৫০ হেক্টর জমিতে জৈব বালাইনাশক ব্যবস্থায় সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, চালকুমড়া, লাউ, কাঁচামরিচ ও কাঁকরোল। তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ার প্রত্যেক চাষির আগ্রহ রয়েছে। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চাষিদের সহযোগিতার মাত্রাও বাড়িয়ে দিয়েছে।

মফিজ জোয়ার্দ্দার

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০