Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:18 am

জোর করে কর আদায় করা যাবে না, নেট বৃদ্ধি করতে হবে: অর্থ উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: যার সামর্থ্য আছেÑসে কম কর দিল, আরেকজন বেশি কর দিল। এতে করদাতার মনও খারাপ হয়ে যায়। করদাতাদের লেভেল প্লেয়িং তৈরি করতে অনলাইন ট্যাক্স সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ‘অনলাইন ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান ই-রিটার্ন ও কল সেন্টার-সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। উপদেষ্টা বলেন, আমাদের করযোগ্য বহু লোক আছে। কিন্তু তারা করনেটের আওতায় আসে না। রিটার্ন দেয় না। তাদের করের আওতায় আনতে হবে। জোর করে কর আদায় করা যাবে না। কিন্তু করনেট বাড়াতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক ঋণ এনে বা সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে চলা যাবে না, রাজস্ব বাড়াতে হবে। সেজন্য সেবার মান বাড়াতে হবে। রাজস্ব আদায়ে ই-রিটার্ন দাখিল বা কল সেন্টার উদ্বোধন করার পর এর মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। স্বাগত বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, গতকাল অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেমে করদাতাদের জন্য উš§ুক্ত করা হয়েছে। অনলাইনে রিটার্নে জমা দেয়ার পাশাপাশি আয়কর সনদ, টিন সনদ ও রিটার্ন নেয়া যাবে। পেমেন্ট মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করা যাবে।
সঞ্চয়পত্র ও ঋণ নিয়ে দেশ চালানো কঠিন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, করদাতা যে কর দেয়, সেটা যেন সরকারের কোষাগারে পৌঁছায়। কোনো লিকেজ যেন না থাকে। সবার কাছ থেকে কর আদায় করব। এজন্য অনলাইনটা করা। কর দেয়ার সক্ষমতা অনেকের আছে। সবাই কর-জালের আওতায় আসে না। টিআইএন অনেকের আছে ফিলআপ করে না।

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে আমরা প্রথম এই রিটার্ন চালু করি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আমাদের সহযোগিতা করছে। অন্যরাও সহযোগিতা করছে। আমরা কম্প্রেহেনসিভ অটোমেশন চাই। ২০২১ সালে মাত্র ৬১ হাজার রিটার্ন পেয়েছিলাম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই লাখ ৪৪ হাজার পেয়েছি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ২৬ হাজার পেয়েছি। এবার আমরা আশা করছি, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের যত ট্যাক্স রিটার্ন পড়বে, তার সিংহভাগই অনলাইনে পড়বে। খুব জোরেশোরে কাজ করছি। অনেক দূর এগিয়েছে। আগামীকাল থেকে কল সেন্টার চালু করতে পারব। জানা গেছে, এক দিনের ব্যবধানে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেমে আট লাখ চার হাজার ৪৪৩টি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। আদায় হয়েছে ৪৭ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬৪ টাকার কর।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আয়কর রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে দুর্নীতি বন্ধে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রোববার অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম করদাতাদের জন্য উš§ুক্ত করেছে। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা সহজে নিজের রিটার্ন তৈরি করে অনলাইনে জমা দিতে পারছেন। এ সিস্টেম থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট (ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড) ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কর পরিশোধ করা যাচ্ছে। জমা দেয়া রিটার্নের কপি, প্রাপ্তিস্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, টিআইএন সনদ ডাউনলোড ও প্রিন্টের সুবিধাও মিলছে। আগের বছরের জমা দেয়া রিটার্নের কপি ডাউনলোড ও প্রিন্টও করা যাচ্ছে। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জোর করে রাজস্ব আদায় করা কিংবা যিনি রাজস্ব দিচ্ছেন, তার কাছ থেকেই আরও বেশি রাজস্ব আদায়ের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া শুরু হয় ২০২১ সাল থেকে। পরবর্তী বছরগুলোয় রিটার্ন জমা অব্যাহতভাবে বেড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আগের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমন্বিতভাবে ই-রিটার্ন কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।