জোর থাকুক ব্যক্তি বিনিয়োগের ওপর

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে আসছে ২৪ জানুয়ারি। এটি ঘোষণা করবেন গভর্নর ফজলে কবির। গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ব্যক্তি বিনিয়োগ গুরুত্ব পাচ্ছে নতুন মুদ্রানীতিতে’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের মুদ্রানীতিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে ব্যক্তি বিনিয়োগ বৃদ্ধির নতুন কলাকৌশল নির্ধারণে। প্রাথমিকভাবে উদ্যোগটি স্বাগত জানানোর মতো। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে সংস্থানমূলক মুদ্রানীতিতে অর্থনীতি যেভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছিল, তার প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়নের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। সংগত কারণে তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের স্বরই ছিল বেশি সরব। তবে মুদ্রানীতির স্টেকহোল্ডার কেবল ব্যবসায়ীরা নন; সমগ্র অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি অনেকাংশে নির্ভর করে এর ওপর। ফলে প্রতিবারের মতো এবারও উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, সাবেক গভর্নর ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন মুদ্রানীতির ধরন ও হাতিয়ার ঠিক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আলোচনাটি ফলপ্রসূ হোক, এটাই কামনা।
খেয়াল করার বিষয়, আমাদের দেশে সাধারণত দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে প্রণীত হয় মুদ্রানীতি। তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে পণ্য ও সেবার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে মুদ্রার পরিমিত সরবরাহ নিশ্চিতকরণ। এও উল্লেখ্য, শুধু মুদ্রার পরিমিত সরবরাহের মধ্য দিয়েই বাজারে স্থিতিশীল মূল্য পরিস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নিকট অতীতেই এক্ষেত্রে এক বিরাট ফ্যাক্টর ছিল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তাই এখন যে পণ্যবাজার মোটামুটি স্থিতিশীল, তার পেছনে মুদ্রানীতির পাশাপাশি বড় ভূমিকা রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার। মুদ্রানীতির দ্বিতীয় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ইস্যু হচ্ছে, প্রক্ষেপিত হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন। সেক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ একটু জটিল। কেননা বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারছে না, সে কথা বলা যাবে না। বরং অনেক দেশের সামনেই দুর্যোগময় বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হিসেবে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশকে। কথা হচ্ছে, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধির চলতি হার সন্তোষজনক নয়। তার অন্যতম কারণ ব্যক্তি বিনিয়োগ হ্রাস। লক্ষণীয়, বিরাজমান স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকঋণে সুদহার কমানো হয়েছে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী। এদিকে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও ‘অস্বাভাবিক’ গতিতে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ায় কমেছে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা। এতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রাপ্তি সহজতর হওয়া সত্ত্বেও ব্যাংক ঋণে নাকি চাহিদা কম উদ্যোক্তাদের। জানা যায়, বর্তমানে ব্যাংকগুলোয় রয়েছে আনুমানিক এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার অলস তারল্য। অথচ বিনিয়োগ পরিস্থিতি চাঙা না হলে কঠিন হবে সরকার ঘোষিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি স্থানীয় ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির একটি বড় উপায়। অথচ কেবল রাজনৈতিক বা ঋণ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করেই সিদ্ধান্ত নেন না একজন বিনিয়োগকারী। ভৌত অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সুবিধা সুলভ হওয়াটাও তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকার সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তাও বলা যাবে না। কিন্তু দেখা দরকার, চলমান অবকাঠামো উন্নয়নের গতি আমাদের কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধির হারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ অব্যাহতভাবে বাড়লেও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ানো যাবে না। এ প্রক্রিয়াটি হতে পারে জটিল, বেদনাদায়ক ও ব্যয়বহুল। ফলে আমরা প্রত্যাশা করি, ব্যক্তি বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলভাবে অগ্রসর হবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরেকটি বিষয়, সহজ ঋণ যেন পুঁজির অপচয় না বাড়ায়।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০