হামিদুর রহমান: সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় খুঁড়িয়ে চলছে নব্বই দশকে রাজধানীতে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ মার্কেট। ক্রেতা টানতে না পাড়ায় ব্যবসার ধরনও পাল্টিয়েছে বেশ কিছু মার্কেট। বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কের মতো বেশ কিছু আধুনিক শপিংমল গড়ে ওঠায় জৌলুস হারিয়েছে পুরোনো সেই জমজমাট মার্কেটগুলো।
তথ্যমতে, প্রায় এক যুগ আগেও রাজধানীতে পাঞ্জাবির বড় মার্কেট ছিল মৌচাকের আয়শা প্লাজা ও পীর ইয়ামেনি মার্কেট। তবে সময়ের সঙ্গে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকা, ব্র্যান্ডের কোনো শোরুম না থাকা, প্রোডাক্টের বহুমুখিতার ঘাটতিসহ সৌন্দর্য বৃদ্ধি না করায় মার্কেটগুলো জৌলুস হারিয়েছে।
রাজধানীর কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, সীমান্ত স্কয়ার, গাজী ভবন, গ্ল্যান্ড প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, টুইনটাওয়ার, মালিবাগ সুপার মার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকা, সেঞ্চুরী আর্কেড, বনানী সুপার মার্কেট, সুবাস্তু আর্কেড, মোতালেব প্লাজাসহ বেশ কিছু নামিদামি মার্কেটে এখন আর পুরোনো আমেজ না থাকায় বেশিরভাগ শপিংমল প্রায় বন্ধ হতে বসেছে।
রাজধানীর কয়েকটি পুরোনো শপিংমলের ক্রেতা-বিক্রেতা ও দোকান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, পুরোনো মার্কেটগুলো অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও প্রচারণা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ক্রেতা-দর্শনার্থী টানতে পারছে না। এতে মার্কেটগুলো ব্যবসা হারিয়েছে। আয়েশা প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা ও কর্ণফুলী মার্কেটসহ গুটিকয়েক মার্কেটে শুধু ঈদে কিছুটা কেনাবেচা হলেও বাকি সময় বসেই কাটান দোকানিরা।
অন্যদিকে সিনেমা হল ও খাবার থেকে শুরু সব ধরনের পণ্যের কেনাবেচার সুবিধা থাকায় যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা সিটির মতো শপিংমলগুলোয় ক্রেতারা এখন বেশি ঝুঁকছে। অথচ ঢাকার প্রথম দিকের আধুনিক শপিংমল হিসেবে পরিচিত সেঞ্চুরী আর্কেডের এখন ধরনই বদলে গেছে। বর্তমানে এখানে চশমা, ফেব্রিক্স ও অন্যান্য পণ্যের দোকান দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন। একসময় তার বাবা-মাসহ পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করতেন পীর ইয়ামেনীতে। তবে নতুন প্রজন্মের পাল্লায় পড়ে বাধ্য হয়েই পুরোনো থেকে নতুন শপিংমলে নিয়মিত হয়েছেন তিনি। নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েরা আধুনিক। সবকিছুতেই নতুনত্ব খোঁজে। আমাদের সময়ে শপিংয়ের জন্য জমজমাট মার্কেটগুলোর মধ্যে পীর ইয়ামেনী, ইস্টার্ন প্লাজা, গ্ল্যান্ড প্লাজাসহ বেশি কিছু মার্কেট জনপ্রিয় ছিল। তবে নতুন মার্কেটগুলো অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন হওয়ায় পুরোনো মার্কেটগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, একসময় পীর ইয়ামেনীতে সবার জন্য কেটাকাটা করা হলেও এখন ছেলেমেয়ে বড় হওয়ায় তারা বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্ক ছাড়া অন্য মার্কেটে যেতে চায় না। ফলে বাধ্য হয়েই নতুন মার্কেটে যেতে হচ্ছে।’
রাজধানীসহ সারা দেশে যেভাবে মার্কেট বেড়েছে, মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। বিক্রি কমে যাওয়ার এ কারণটাকেই মুখ্য করে দেখছেন ইস্টার্ন প্লাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মীর মো. আবদুল্লাহ। জানা যায়, ইস্টার্ন প্লাজার বেশিরভাগ ক্রেতাই পুরোনো ঢাকার। বর্তমানে এ মার্কেটে তৈরি পোশাকের বিক্রি কমলেও বেড়েছে হ্যান্ডসেট ও যন্ত্রাংশের ব্যবসা। এ মার্কেটের দোকানিরা জানান, রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিংমল চালু হওয়ার পর থেকে এ মার্কেটে পোশাকের দোকানে বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি। এছাড়া যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ারের মতো শপিংমলগুলো ক্রেতা বাগিয়েছে এসব মার্কেটের।
গ্ল্যান্ড প্লাজা শপিংমলের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রাজধানীতে পুরোনো দিনের বেশিরভাগ মার্কেটের অবস্থা নাজুক। তবে বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কসহ গুটিকয়েক মার্কেট ছাড়া প্রায় সব এলাকার মার্কেটের অবস্থায় একই রকম। বর্তমান সময়ে সবকিছুর পরিবর্তন ঘটলেও পুরোনো মার্কেটগুলোর পরিবর্তন ঘটেনি। অনেক শপিংমলের বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা দোকান ছেড়ে দিচ্ছেন। অনেক সময় মার্কেট কর্তৃপক্ষ কম দামে দোকান ভাড়া দিলেও দোকানি পাচ্ছে না। আবার কিছু দোকান ভেঙে অফিস বানিয়ে ভাড়াও দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, এখনকার গ্রাহকরা একই ছাদের নিচে সব রকম সুবিধা চায়। কেননা নব্বইয়ের দশকে ঢাকার রাস্তায় এত যানজট ছিল না, সবাই সব দিকে মুভ করতে পারত। বর্তমান সময়ে শপিং ছাড়া অফিসের কাজে বের হলেও যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া ঈদ কিংবা অন্যান্য উৎসবের সময় রাজধানীতে যানজট আরও বেড়ে যায়, যে কারণে মানুষ এখন এমন কিছু চায়, যেখানে সহজেই সব রকম পণ্য পাওয়া যায়।’

Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:24 pm
জৌলুস হারিয়েছে রাজধানীর পুরোনো মার্কেটগুলো
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: