জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে কালামৃধা গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়

শিপন আহমেদ: “১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের বিদ্যালয়টি। ১৯৪২ সালের ২৮ জানুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একে স্বীকৃতি দেয়। তিন উপজেলার মোহনায় অবস্থিত বিদ্যালয়টি। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছি। তাদের সুশিক্ষিত করতে চাই। শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ শিক্ষাসহায়ক প্রতিযোগিতার জন্য তাদের প্রস্তুত করছি। বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ও পরিবেশ সময়োপযোগী। আমাদের প্রত্যাশা এখানকার শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের আলোকিত মানুষ হবেন।”

 

মো. নওশেরউজ্জামান ফকির, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়, অথচ কিছু বাধাবিপত্তির কারণে এর নির্মাণকাজ স্থগিত থাকে কয়েক বছর। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এর কাজ শুরু হয়েছিল, তা সময়ের পরিক্রমায় পেরিয়ে গেছে সব ধরনের বন্ধুর পথ। তৈরি করেছে অসংখ্য কৃতী শিক্ষার্থী। এতক্ষণ ধরে বলছি, ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের অন্যতম নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কালামৃধা গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের কথা।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও জমিদার কুমুদিনী কান্ত নাথ চৌধুরী তার জমিতে ১৯১৭ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কাজ সূচনা করেন। তখন গ্রামের নাম অনুযায়ী এর নাম রাখা হয় কালামৃধা মধ্য ইংলিশ স্কুল। তবে কয়েকজন জমিদারের বাধার কারণে কয়েক বছর পর স্থগিত হয়ে যায় এর কাজ। আবার ১৯২২ সালে একই নামে বিদ্যালয়টি নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

১৯২৭ সালে বিদ্যালয়টি হাই স্কুল পর্যায়ে উন্নতি করে নাম রাখা হয় কালামৃধা হাই স্কুল। ১৯২৯ সালে বিদ্যালয়ের কঠিন দুরবস্থায় এর উন্নতি সাধনে চন্দ্রকান্ত নাথ যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেন। এ অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ চন্দ্রকান্ত নাথের প্রয়াত বাবা গোবিন্দ চন্দ্র নাথের নামের অংশ যুক্ত করে বিদ্যালয়টি নামকরণ করা হয় কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারিতে বিদ্যালয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি স্থায়ীভাবে স্বীকৃতি পায় ১৯৪২ সালের ২৮ জানুয়ারি। এভাবে বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে এ বিদ্যালয়ের নামের পরিবর্তন ঘটে। সর্বশেষ পরিবর্তন ঘটে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর। তখন হাই স্কুল শব্দ দুটির পরিবর্তে উচ্চ বিদ্যালয় যুক্ত করে পুরোপুরি বাংলায় বর্তমান নামকরণ করা হয়Ñকালামৃধা গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়।

বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি ও কারিগরি শিক্ষায় এক হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলে-মেয়ে উভয়েই অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আটটি শাখা রয়েছে। সব শাখার জন্য রয়েছে আলাদা শ্রেণিকক্ষ। বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মাধ্যম হচ্ছে বাংলা। প্রতিষ্ঠাকালে এ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৬৮ জন।

ছয় একর ৬৬ শতক জমির ওপর বিশালাকার দোতলা ও তিনতলাবিশিষ্ট ভবন এবং একটি টিনশেড স্কুলঘর রয়েছে। শিক্ষক মিলনায়তন, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, গ্রন্থাগার, কম্পিউটার ল্যাব ও সায়েন্স ল্যাবের জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে। প্রার্থনার জন্য রয়েছে মসজিদ। দূরবর্তী ছাত্রদের জন্য একটি টিনশেড হোস্টেল রয়েছে।

বিদ্যালয়টিতে ১৫ শিক্ষক-শিক্ষিকা, একজন অফিস সহকারী, একজন নৈশপ্রহরী, একজন দফতরি ও একজন আয়া রয়েছেন।

বিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ভারতে নিযুক্ত প্রাক্তন হাইকমিশনার সুশীল কুমার ব্যানার্জী, পশ্চিম বঙ্গের বিধানসভার সদস্য এমএলএ ননী কর, এমএলএ জগদীশ চন্দ্র দাস, এজিবির অবসরপ্রাপ্ত অডিটর নূর মোহাম্মদ খলিফা, আইন মন্ত্রণালয়ের সেকশন অফিসার ফজলুর রহমান ফকির, মাগুরা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান খন্দকার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) আজিম উদ্দিন আহমেদ, যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর আবদুল মান্নান সিকদার, এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ, মহিলা ও পুনর্বাসন অধিদফতরের উপ-পরিচালক ফকির মোকলেসর রহমান, প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর, কলকাতা আর.জি.কর. মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান ডা. গৌর গোপাল পোদ্দার, এজিবির (সিএও) প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা

মো. দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শাজাহান, সোভিয়েত রাশিয়ার ইউক্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী (আকাশ বিজ্ঞান) ড. পঞ্চানন দত্ত প্রমুখ। এ বিদ্যালয়ের অনেক কৃতী ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন সময়ে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। মেধা ও প্রতিভাবলে তারা দেশ, জাতি ও মানবসেবায় অবদান রাখছেন।

খেলাধুলায় এ বিদ্যালয়টি বিভিন্ন সময় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল প্রভৃতি আউটডোরে খেলার সুবিধা দিতে বিশাল মাঠ রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খেলার সরঞ্জাম। এ বিদ্যালয়ের বয়েজ স্কাউট দল ১৯৯৪ সালে পঞ্চম বাংলাদেশ জাতীয় ও চতুর্দশ এশিয়া প্যাসিফিক স্কাউট জাম্বুরিতে অংশগ্রহণের গৌরব অর্জন করেছে।

শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, মানবিক গুণাবলি ও উন্নত মানসিকতা সৃষ্টির বিকাশে বিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষ যত্নশীল। শিক্ষার্থীদের দৈনিক সমাবেশের সুযোগ রয়েছে এখানে।

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০