আব্দুল হাকিম, রাজশাহী : পদ্মানদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত রাজশাহীর সোনাদিঘী মোড়, যা পুরোনো বইয়ের মার্কেট বা বাজার নামে পরিচিত। নগরীর এই ঐতিহ্যবাহী পুরোনো বইয়ের দোকানে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পরিবারের একমাত্র ভরসাস্থল। স্বল্প দামে ভালো বই পাওয়ায় সবাই এখানে জমান দীর্ঘ লাইন। আর এই শিক্ষার্থীদের বই কেনার অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন শত শত পরিবার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, একাডেমিক, অ্যাডমিশন, জব প্রিপারেশনসহ সব ধরনের বই রাখা আছে, সারি সারি সাজানো আছে সেখানে। নতুন বইয়ের দোকানের কাছে হওয়ায় সব সময় শিক্ষার্থীদের আনাগোনাও দেখা যায় চোখে পড়ার মতো। এখানে প্রায় শতাধিক পুরোনো বইয়েরে দোকান আছে। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার বই কেনাবেচা হয়। দামে কম হওয়ার বইপ্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এসব অস্থায়ী বইয়ের দোকান। সব ধরনের ক্রেতারাই এসব দোকান থেকে বই সংগ্রহ করছেন।
১৯ বছর ধরে পুরোনো বই বেচাকেনা করছেন ফারুক হোসেন। তিনি জানান, সোনাদীঘি মোড়ে এই পুরোনো বইয়ের দোকান প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে। তবে সঠিক তথ্য জানা নেই। হয়তো আরও বেশি দিনের হতে পারে এই বইয়ের বাজার। এই বাজারে প্রায় ৯০ দশকেরও পুরোনো বই পাওয়া যায়। পুরোনো বই বেশি কেনেন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে প্রথম শ্রেণির বই থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সব বই এখানে পাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, তাদের দৈনিক ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকার মতো বই বিক্রি হয়। পুরোনো বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মে, জুন ও জুলাই মাসে। এই সময় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শুরু হয়। এছাড়া অনার্সে ভর্তি চলে। ফলে তাদের বেচাকেনা তুলনামূলক বেড়ে যায়।
আরেক বই বিক্রেতা খাইরুল ইসলাম বলেন, পুরোনো বই বিক্রি করে বেশি লাভ হয় না। প্রতিদিন ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার বই কেনা হয়। এর মধ্যে তাদের কর্মচারীর বেতন, দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য দিতে হয়।
খাইরুল জানান, তাদের বেশিরভাগ বই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেনেন। আর পাইকারি বই কেনার দরকার হলে তারা বগুড়া বা ঢাকার নীলক্ষেত থেকে বই কেনেন। তবে নির্বাচনের কারণে পুরোনো বইয়ের বাজার কম চলছে। বিশেষ করে বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীরা বাসায় চলে যাওয়ায় ব্যবসা অনেক ধীর গতিতে চলছে বলে জানান তিনি।
প্রায় ৩৫ বছর থেকে এখানে বই বিক্রি করেন মো. ইয়ামিন হোসেন। তিনি জানান, তার দোকানে বেশিরভাগ পুরোনো বই থাকে মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে যেসব বই পরিবর্তন হয় না সেসব বই বেশি বিক্রি হয়।
বাংলাদেশের শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন কারিকুলাম প্রকাশিত বই আসায় তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ করে বলেন, নতুন কারিকুলামের বই সম্পূর্ণ নতুন হয়, এই নতুন সিলেবাসের সঙ্গে পুরোনো কোনো বইয়ের মিল থাকে না। ফলে পুরোনো বইগুলো কেনার মতো কেউই থাকে না। আমাদের এই বইগুলো কেজির দরে বিক্রি করতে হয়।