বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ এই সময়ে প্রযুক্তির নেতিবাচক থাবা থেকে তরুণদের বইয়ের দিকে আকৃষ্ট করার একটি অনন্য উদ্যোগ হিসেবে অমর একুশে বইমেলার গুরুত্ব সর্বাধিক। এই তরুণ-তরুণীরা নতুন নতুন লেখকের বই পড়ে জ্ঞানের প্রসারে যেমন উৎসাহিত হয় তেমনি তাদের আগ্রহের জোরে নতুন নতুন লেখকেরাও নতুন বই লেখায় অনুপ্রেরণা পায়। তাইতো ১৯৫২ সালের ভাষাশহিদদের স্মরণে বা তাদের মহান স্মৃতিকে অক্ষুণœ রাখতেই অমর একুশে গ্রন্থমেলার যাত্রা শুরু হয়। জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণে মাত্র ৩২টি বই নিয়ে চিত্তরঞ্জন শাহার হাত ধরে ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সূচনা ঘটে অমর একুশে বইমেলার। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এখানে সব বয়সের ও সব শ্রেণির মানুষের জন্যই তৈরি করা হয় আলাদা কর্নার যেমন শিশুদের জন্য রয়েছে শিশুতোষ বই ও ম্যাগাজিন, কিশোর বয়সীদের জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক বই, এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের জন্য রয়েছে অসংখ্য উপন্যাস ও সয়েন্স ফিকশন যেখান থেকে প্রত্যেক বয়সী মানুষ তাদের পছন্দসই বই সহজেই সংগ্রহ করতে পারে। তরুণ-তরুণীরা আবার বইমেলায় বিভিন্ন জীবিকার সন্ধানও পেয়ে থাকে, অর্থাৎ বইমেলায় বিভিন্ন স্টলের দায়িত্বে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভিন্ন কলেজে অধ্যয়নরত তরুণ-তরুণী। এতে তাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞানের পাশাপাশি কিছু অর্থ উপার্জনেরও সুযোগ ঘটে, যা তাদের আত্ম সচ্ছল হতেও সহায়তা করে। এছাড়া বই মানুষকে সত্যের পথ ন্যায়ের পথেও পরিচালিত করে মানুষকে বিশুদ্ধ হতেও সহায়তা করে থাকে। একদা ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছিলেন, আমার মধ্যে যদি উত্তম কিছু থাকে তবে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে দায়ীÑ তার এ উক্তিটির মর্মার্থই বলে দেয় জীবনের প্রত্যেকটি পদক্ষেপের শিক্ষাই আমাদের বই থেকে অর্জিত। তাইতো বইমেলা পাঠক-লেখকের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে শেখায় নতুন জীবনের পথ চলার গল্প, শেখায় নতুনভাবে নিজেকে প্রকাশ করার গল্প। বইমেলাকে পাঠক ও লেখকের ভাব বিনিময়ের অন্যতম ক্ষেত্রও বলা যায়। কারণ বিভিন্ন বয়সী মানুষ তাদের আগ্রহের তালিকা অনুযায়ী বই ক্রয় করে ফলে লেখকেরা বুঝতে সক্ষম হয় যে পাঠকের আগ্রহের জায়গা কোথায় এবং পরে তারা সে অনুযায়ী বই রচনায় উৎসাহিত হয়। এভাবেই চলতে থাকে ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে জ্ঞানের ও আদান প্রদানের খেলা। বইমেলা এমন একটি স্থান যেখানে পাঠক রুচিশীল ও মনোরম পরিবেশে পছন্দের বইটি কিনে মনের খোরাক জোগাতে পারবে। এছাড়া বইমেলায় একটি নির্দিষ্ট পরিসরে সব রকম বইয়ের সমাবেশ থাকায় ক্রেতারা অল্প পরিশ্রমে এবং অল্প সময় ব্যয় করে নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী বই সংগ্রহ করতে পারে। বইমেলায় শুধু বই-ই পাওয়া যায় তা নয়, বইমেলা হয়ে ওঠে বিনোদনকেন্দ্র। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান, গানের আসর, কবিতা আবৃত্তির আসর, আলোচনা সভা, মঞ্চ নাটক ইত্যাদি মেলার সৌন্দর্যবর্ধন করে। বইমেলার উš§ুক্ত ও রুচিশীল পরিবেশ পাঠক-দর্শককে বিস্মিত ও আনন্দিত করে, যা বইমেলার প্রতি পাঠকের আকর্ষণ অধিকতর বৃদ্ধি করে। বইমেলা শুধু একটি বইমেলাই নয়, এটি আমাদের দেশের বহুপ্রতীক্ষায় মাতৃভাষা অর্জনের একটি প্রতিচিত্র। এটি যেমন আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়, সেই সঙ্গে আমাদের বর্তমান ভাবধারার সঙ্গে তাল মেলাতে সহায়তা করে এবং ভবিষ্যতের সুদূরপ্রসারী চিন্তার ক্ষেত্রও তৈরি করে। যেহেতু বইমেলা আমাদের পাঠক, লেখক ও পরিচালকের একটি মহামিলনমেলার পাশাপাশি জ্ঞানের বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকে এবং এটি আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সহায়তা করে থাকে, তাই বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ও আগ্রহের প্রাধান্য বিবেচনায় রেখে জ্ঞানের বিকাশে যুগ যুগ চলমান থাক বইমেলার কার্যক্রমÑ এ প্রত্যাশাই সব বইপ্রেমিক মানুষের।
সামিয়া খানম
শিক্ষার্থী
শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়