জ্বরঠুঁটো বা ফিভার ব্লিস্টারের সঙ্গে আমরা কম-বেশি পরিচিত। একে অনেক সময় কোল্ড সোরও বলা হয়। মৌসুম বা আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে অনেকেরই জ্বর হয়। এ জ্বর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসজনিত। প্রায়ই এমন জ্বর সেরে যাওয়ার পর অনেকের ঠোঁটের পাশে ঠুঁটো বা ফুসকুড়ির মতো উঠতে দেখা যায়। আবার কারও কারও প্রায় সারাবছরই ঠোঁটে বা নাকের পাশে জ্বরঠুঁটো হয়। জ্বরের পরে এটি দেখা যায় বলে ইংরেজিতে এর নাম ফিভার ব্লিস্টার।
জ্বরঠুঁটো হলে দেখতে যেমন খারাপ লাগে, তেমনি ব্যথায় কষ্ট পেতে হয়।
লক্ষণ: ঠোঁটের কোণে বা এর আশপাশে গুচ্ছবদ্ধ ফুসকুড়ি ওঠে। এ সময় অনেকের জ্বর থাকে বা জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর এমন ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ফুসকুড়িগুলো ব্যথা করে, মুখ খুলতে বা খেতে কষ্ট হতে পারে। এ সময় বমিভাব কিংবা বমি ও মাথাব্যথা থাকতে পারে। জ্বরঠুঁটোর মূল কারণ হলো হারপিস সিমপ্লেক্স টাইপ-১ ভাইরাসের সংক্রমণ। এই সংক্রমণের কারণেই জ্বরও আসে। তবে অন্য কোনো সংক্রমণজনিত জ্বরেও জ্বরঠুঁটো উঠতে পারে, যদি শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়।
অ্যান্টিভাইরাল উপাদানসমৃদ্ধ টি ট্রি অয়েল তুলায় নিয়ে জ্বরঠুঁটোয় ব্যবহার করুন। দিনে বেশ কয়েকবার ব্যবহারে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। এ ছাড়া সুতি কাপড় অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে ভিজিয়ে জ্বরঠুঁটোয় ব্যবহারে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। রসুনের কোয়া বেটে সরাসরি ক্ষত স্থানে দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার ব্যবহারেও দ্রুত উপকার পাবেন। ক্ষতস্থানে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল-সমৃদ্ধ মধু লাগিয়ে রাখুন পাঁচ থেকে ১০ মিনিট। দিনে অন্তত দুবার ব্যবহার করুন, দেখবেন জ্বরঠুঁটো দ্রুত সেরে যাবে। জ্বরঠুঁটো-আক্রান্ত স্থানে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তবে কোনোভাবেই জ্বরঠুঁটো আক্রান্ত স্থানে নখ লাগাবেন না। অনেক সময় ব্লিস্টার হাত দিয়ে খোঁচাখুঁচির কারণে ইনফেকশন হয়ে ত্বকে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে। কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত এই সংক্রমণ থাকলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
প্রতিকার: জ্বরঠুঁটো যেহেতু ছোঁয়াচে, তাই সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহƒত পানির গ্লাস, চামচ, কিংবা প্রসাধনী ব্যবহারে বিরত থাকুন। এমনকি নিজের জ্বরঠুঁটো স্পর্শ করলেও ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা ভালো। সানস্ক্রিন ক্রিম, লিপ-বাম ব্যবহার করা ঠোঁটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যেকোনো সংক্রমণ ঠেকাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো দরকার।
ডা. জাহেদ পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল