জ্বালানির দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় বস্ত্র খাতের বিনিয়োগকারীরা

আতাউর রহমান: গত শনিবার থেকে সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এর মধ্যে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ এই দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৪২ শতাংশ। লিটারপ্রতি পেট্রোলের দাম ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। অকটেনের দাম বেড়েছে ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা। অর্থাৎ পেট্রোল ও অকটেনের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির হার ৫০ শতাংশেরও বেশি। সরকারের এই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে চিন্তিত সবাই। কারণ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়, বেড়ে যায় জীবন চালানোর খরচ। সেই খরচ বেড়ে যাওয়ার চিন্তায় পড়েছেন বস্ত্র খাতের সংশ্লিষ্টরা এবং পুঁজিবাজারে সেই খাতের বিনিয়োগকারীরা।

গতকাল রোববার পুঁজিবাজারের বস্ত্র খাতের পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলোচ্য খাতটিতে গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৫ শতাংশই লেনদেন হয়েছে, যা টাকার পরিমাণে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা। তবে লেনদেন অনুযায়ী খাতটিতে গতকাল তেমন রিটার্ন পাওয়া যায়নি। গতকাল খাতটিতে মাত্র দশমিক ২ শতাংশ রিটার্ন এসেছে, যা গতকাল বাজারের সবচেয়ে সর্বনি¤œ রিটার্ন। এদিন খাতটিতে মোট ৫৮টি কোম্পানি লেনদেন করেছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৪ টি কোম্পানির, দর কমেছে ২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টি কোম্পানির। খাতটিতে এত বেশি লেনদেন হয়েও যেমন রিটার্ন আসেনি ঠিক, তেমনি খাতটিতে দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে তিনটি কোম্পানির, যা কোম্পানিগুলোর আগের দিনের দরের আট ও সাত শতাংশ।

বস্ত্র খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের কারখানার জ্বালানি খরচ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। এই খরচ বেড়ে গেলে তাদের পণ্য উৎপাদনের খরচও একই সঙ্গে বেড়ে যাবে। কিন্তু তারা বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে সেই বেড়ে যাওয়া দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। এরই মধ্যে তারা যেই দামে অর্ডার নিয়েছে, সেই দামেই তাদের পুরোনো অর্ডারের পণ্য বিক্রি করতে হবে।

তারা বলছেন, সর্বশেষ ধাক্কা এমন সময়ে এলো যখন আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার পাওয়ার মন্দা সময় যাচ্ছে এবং তৈরি পণ্যের কম দাম দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের উচ্চ মূল্য এবং ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ায় ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করার প্রয়োজন হচ্ছে। তাই আগে থেকেই যেখানে খরচ বেড়ে যাওয়ার লড়াই চলছে, সেখানে আবার নতুন করে ২৫ শতাংশ খরচ বেড়ে যাওয়ার লড়াই যোগ হয়েছে।

এ বিষয়ে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশব্যাপী সব জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদনকারী কারখানাগুলো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হবে। এর মধ্যে অন্যতম এবং রপ্তানিতে বিশেষ অবদান রাখা একটি হলো বস্ত্র খাত। খাতটি রপ্তানিতে বিশেষ অবদান রাখে, কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে তাদের খরচ বেড়ে যাবে, কিন্তু খাতটিতে উৎপাদনকৃত পণ্যের দাম সেভাবে বাড়বে না। এদিকে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া এবং সেরকম ভালো মানের অর্ডার না পাওয়া তো আছেই।

তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে আলোচ্য খাতগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বস্ত্র খাত। এ খাতটিতে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক ও জ্বালানি খাতের মতোই বেশি আগ্রহ থাকে বিনিয়োগকারীদের। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বছর শেষে মুনাফায় এর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে এ খাতের বিনিয়োগকারীদের। তাই গত কয়েক দিনে খাতটিতে বিনিয়োগের একটি অংশ অনেক বিনিয়োগকারী গতকাল তুলে নিয়েছেন বলে মনে করছেন তারা। এ কারণেই খাতটিতে লেনদেনের এক-চতুর্থাংশ হলেও সেরকম রিটার্ন হয়নি বলে জানান তারা।

আবার কেউ কেউ বলছেন, কোম্পানিগুলোর খরচ বাড়লেও মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব না পরারই বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ কোম্পানিগুলো রপ্তানিমুখী, তাই টাকার অবমূল্যায়নে কোম্পানিগুলো ডলারের বিপরীতে বেশি আয় করবে, যা কোম্পানিগুলোর খরচ বেড়ে গেলেও বছর শেষে ভালো মুনাফা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

এ বিষয়ে তালিকাভুক্ত বেশি কিছু কোম্পানির সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কিছু বলতে রাজি হননি। তবে অ-তালিকাভুক্ত একাধিক কোম্পানির সচিবের নাম না প্রকাশের শর্তে তারা শেয়ার বিজকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তো উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। তবে সেটা কী পরিমাণে বাড়বে, তা বলা যাচ্ছে না। সেটা বেশি নির্ভর করে পণ্য আনা-নেয়ার যাতায়াত খরচ এবং কারখানায় বিদ্যুৎ না থাকলে ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহারের ওপর। 

তারা আরও বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে বলতে চাইবে না। কারণ এর কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে প্রভাব পড়বে। বছর শেষে কোম্পানিগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক একটা প্রভাব পড়বে, যা আগে থেকেই সবাই আশঙ্কা করছে। তাই তারা আপাতত কিছু এ বিষয়ে বলতে চাচ্ছে না।

এ বিষেয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও এএফসি ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহাবুব হোসাইন মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, বিনিয়োগকরীদের এ বিষয় নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বস্ত্র খাত দেশের রপ্তানিমুখী একটি বিশেষ খাত। বর্তমানে টাকার যে অবমূল্যায়ন হয়েছে, এতে রপ্তানি করা বস্ত্র কোম্পানিগুলো বেশ লাভবান হয়েছে। কারণ তারা ডলারের বিপরীতে টাকার মানে পাঁচ থেকে সাত টাকা বেশি পাচ্ছে। সে হিসেবে কোম্পানিগুলোর খরচ যা বাড়বে, তারা রপ্তানি করে ডলারপ্রতি যে বেশি লাভ করবে তাতে কোম্পানিগুলোই লাভবান থাকবে। এতে দেখা যাবে, বছর শেষে কোম্পানিগুলোর মুনাফা ভালো হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০