শেয়ার বিজ ডেস্ক: বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় সময় গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানির দর বৃদ্ধিতে এশিয়ার পুঁজিবাজারের সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। একই সঙ্গে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিপরীতে বেড়েছে ডলারের দামও। খবর: ব্ল–মবার্গ, রয়টার্স।
আসন্ন শীত মৌসুম কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ক্রুড অয়েলের দাম দুই দশমিক সাত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেলপ্রতি ৮১ ডলার ছাড়িয়েছে, যা গত সাত বছরে সর্বোচ্চ। যদিও গত সপ্তাহেও ইউএস ক্রুড অয়েলের দাম চার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। আর অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম এক দশমিক ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৩ দশমিক ৫৯ ডলার ছাড়িয়েছে।
চীনের পুঁজিবাজার শক্তিশালী হওয়ায় গতকাল এশিয়ার স্টকে সূচকের উন্নতি হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিটেও দিনের শুরুর ক্ষতি কিছুটা হ্রাস করেছে। এদিকে জাপানি ইয়েনের বিপরীতে ডলারের দাম গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে এএনজেডের একজন বিশ্লেষক গতকাল এক নোটে লিখেছেন, ‘বন্ডের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ছে, মূল্যস্ফীতিও আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন ছদ্মবেশে আর্থিক কঠোরতা আরও বাড়ছে।’
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী চিপ সংকট আগামী বছর পর্যন্ত আরও সম্প্রসারিত হবে। এ অবস্থায় আর্থিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি দ্রুত করতে হলে এখনই জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
এদিকে গতকালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, চীনের ব্ল–ম চিপ-খ্যাত সূচক সিএসআই৩০০ শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ছে, যা এশিয়ার শেয়ার সূচক স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছে। আর জাপানের বাইরে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের এমএসসিআই সূচক শূন্য দশমিক সাত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে ইয়েনের পতন জাপানের নিক্কেই (এন ২২৫) সূচকে আরও এক দশমিক ছয় শতাংশ লোকসান বাড়িয়েছে। যদিও অস্ট্রেলিয়ার এএক্সজেও সূচক আগের দিন শূন্য দশমিক চার শতাংশ হ্রাসে বন্ধ ছিল।
এদিকে ওয়াল স্ট্রিটে নাসডাক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক উভয়ই শূন্য দশমিক দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও শুরুতে সূচক কম ছিল। অন্যদিকে ইউরোপের ইউরোস্টক্স৫০ সূচক শূন্য দশমিক এক শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আর এফটিএসই সূচক শক্তিশালী অবস্থানে ছিল।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশটিতে নতুন কর্মসংস্থান কম হলেও বেকারত্ব হার পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ থেকে কমে চার দশমিক আট শতাংশে নেমেছে, যার কারণে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে ঘণ্টায় মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রেজারি বন্ডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য বিনিয়োগকারীরা বন্ড কেনা শুরু করেছেন।
গতকালে দেখা যায়, ১০ বছর মেয়াদি ইউএস ট্রেজারি বন্ডের দাম এক দশমিক ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ১৫ বেসিস পয়েন্টে গত মার্চ থেকে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। এছাড়া এশিয়া ও ইউরোপেও স্বল্প মেয়াদি বন্ডের দাম বেড়েছে। যুক্তরাজ্যের বন্ডের দাম ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সবচেয়ে বেশি ছিল।
জার্মানি ও জাপানের মুদ্রামান ডলারের বিপরীতে পড়ে গেছে। গতকাল ডলারের বিপরীতে ১১২ দশমিক ৬৭ ইয়েন দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৮ সাল থেকে গত তিন বছরের ডলারের সর্বোচ্চ দাম।
অন্যদিকে ইউরোর মান গত বছরের জুলাইয়ে ইউরোপ্রতি ১.১৫৭০ ডলারের চেয়ে কমে ১.১৫২৭ ডলারে নেমেছে। যদিও সম্প্রতি ডলার সূচক ৯৪.৫০৪ থেকে কমে ৯৪.১৩৩-তে নেমেছে। আর ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বর্ণের দাম সামান্য কমে আউন্সপ্রতি এক হাজার ৭৫৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
