Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:48 pm

জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির অভিঘাত বিবেচনায় নিন

 

‘বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদকালে ডিজেলের দাম ২৩৭ শতাংশ এবং পেট্রোল-অকটেনের দাম বেড়েছে ১৬৯ শতাংশ। বৈশ্বিক মাহামারি কভিডকালে ২০২০ সালে তেলের দাম রেকর্ড পর্যায়ে নামে। এতে অস্বাভাবিক মুনাফা করে ফুলেফেঁপে ওঠে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তবে দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমেনি।  অথচ লোকসানের অজুহাতে বিভিন্ন সময় দেশে তেলের দাম ঠিকই বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মার্চ থেকে প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা হবে। এজন্য নীতিমালাও অনুমোদন করে রেখেছে সরকার। এতে ডিজেলের দাম বেড়ে যেতে পারে।

জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে  সাধারণ মানুষের ওপর কী প্রভাব পড়ে, তা বিবেচনায় নিয়ে দাম বৃদ্ধি কিংবা সমন্বয় না করা হলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অভিঘাত পড়বে গণপরিবহনসহ জনজীবনের প্রতিটি খাতে। পরিবহন খরচ বাড়লে নিত্যপণ্যের দামও বাড়বে। তেলের দাম বাড়ানোর ফলে কৃষক থেকে শুরু করে নাগরিক মধ্যবিত্তরা ভোগান্তির শিকার হবেন বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বে এবং সংসারের মৌলিক চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়বে। নাগরিক সমাজ থেকে গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা হয়। সব শেষে তারা উপসংহারে পৌঁছান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মোটেই প্রয়োজন ছিল না।

প্রতিবারই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে বাস, ট্রাক, লঞ্চসহ সব পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যায়। পরে জানা যায় পরিবহনভাড়া এমনিতেই বেশি। তখন সরকারকে নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বলতে হয়, পরিবহনভাড়া আগের মতোই থাকবে। আমরা মনে করি, নতুন করভার সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়াবে। নানা অজুহাতে কয়েক দফা নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু শ্রমজীবী-কর্মজীবীদের মজুরি ও বেতন সেভাবে বাড়ছে না। মধ্যবিত্তরাও সংকোচ ভুলে সাশ্রয়ী দামে লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে ভোগ্যপণ্য কিনছেন। সরকার যদি জ্বালানি তেলের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দেয়, তা হবে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে জ্বালানিনির্ভর যেসব খাতে খরচ বাড়ে, সেসব খাতে ব্যবসায়ীদের নিবৃত্ত করতে হবে। মোটরযানে ব্যবহƒত জ্বালানির দাম বর্তমান মূল্য থেকে আদায় করা হবে নাকি দাম বাড়িয়ে আদায় করা হবে, সেটি স্পষ্ট আগেই করা হয়নি। জ্বালানি তেল শুধু যানবাহন নয়, কৃষিকাজেও ব্যবহার করা হয়। করের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত রবি মৌসুমে কৃষকের সুবিধার জন্য জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে। কৃষককে রক্ষায় আমাদেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক নির্মাণের মতো রক্ষণাবেক্ষণ সেভাবে দৃশ্যমান হয় না। ফলে আদৌ রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কি না, সেটিও দেখতে হবে। তাছাড়া এই তহবিল অনেক বড় হওয়ায় অনিয়ম বা দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপব্যবহারেরও আশঙ্কা থাকে। এমন যেন না ঘটে, তাও সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।