শেয়ার বিজ ডেস্ক: একটি ছোট শহর নিজস্ব বিদ্যুৎব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে, শহরের স্কুলগুলোয় সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে এবং এক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব সোলার ওয়াটার হিটার স্থাপন করেছে। এমন ছোট উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার জ্বালানি বিল সাশ্রয় হচ্ছে। দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ক্ষুদ্র উদ্যোগের সুফল পাওয়ায় দেশটির কর্তৃপক্ষ জ্বালানি খাতের উন্নয়নের জন্য সৌরবিদ্যুতের ওপর নজর দিয়েছে। খবর: বুয়েন্স আইরেস টাইমস।
বর্তমানে আর্জেন্টিনার ৮৪ শতাংশ জ্বালানির উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল, জীবাশ্ম জ্বালানি। এসব উৎসের উৎপাদন এবং ব্যবহারের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে ইকোসিস্টেম, সমাজ ও জনস্বাস্থ্যে। পরিবেশের এ ক্ষতির জন্য দায়ী মুষ্টিমেয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান প্রায়ই জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য সরকারের তরফ থেকে প্রণোদনা ও ভর্তুকি পেয়ে থাকে।
এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে চাইছে আর্জেন্টিনার জ্বালানি খাত। এজন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎসের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, যার আওতায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, এমনকি গৃহস্থালি পর্যায়ের জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আর্জেন্টিনার জ্বালানি মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশজুড়ে ১ হাজার ১৬৭টি নিজস্ব প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে ২১ দশমিক ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে।
ন্যাশনাল টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির এনার্জি অ্যান্ড সাসটেইনঅ্যাবিলিটি অবজারভেটরি বিভাগের পরিচালক পাবলো বার্টিনাট চায়না ডায়ালগকে বলেন, জ্বালানি বিকেন্দ্রীকরণ প্রকল্পের অনেক সুফল রয়েছে। যেমন জ্বালানি নীতিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে যাতে জনগণের জীবনমান উন্নত হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনগুলো স্থানীয় ভোক্তাদের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার বিদ্যমান কিছু সমস্যার সমাধান হবে।
সান্তা ফে প্রদেশের একটি ছোট শহর আর্মস্ট্রং, এখানে ১৫ হাজার মানুষ বাস করেন। এখানকার অর্থনীতি কৃষিকাজ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভরশীল; এর মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি উৎপাদন। এ শহরে বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে আসছে আর্মস্ট্রং
কো-অপারেটিভ ফর দি প্রভিশন অব পাবলিক ওয়ার্কস, সার্ভিসেস অ্যান্ড ক্রেডিট। এ সংগঠনটির সদস্য ৫ হাজার এবং তারা প্রায় ৬ হাজার ৫০০ মিটার দেখাশোনা করে।
২০১৩ সালে এই সংগঠন দেশটির বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন মন্ত্রণালয়ের কাছে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ প্রাপ্তির পরিবর্তে নিজস্ব সোলার প্যানেল স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি চায়। ২০১৫ সালে এ প্রকল্প অনুমোদন পায় এবং এর আলোকে পাবলিক-প্রাইভেট কনসোর্টিয়াম গঠন করা হয়। যেখানে একদিকে রয়েছে কো-অপারেটিভ সংগঠনগুলো; অন্যদিকে দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (আইএনটিআই) ও দ্য ন্যাশনাল টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (এই দুই প্রতিষ্ঠান সরকারি ভর্তুকি পায়)। এরপর সান্তা ফেতে সোলার ফটোভোলটেইক প্লান্ট নির্মাণ করা হয়; এ ধরনের প্রযুক্তি আর্জেন্টিনায় প্রথম।
আর্জেন্টাইন ফেডারেশন অব ইলেকট্রিসিটি
কো-অপারেটিভসের (এফএসিই) মতে, আর্মস্ট্রংয়ের মতো এমন সংগঠনগুলো দেশটির ১৭ শতাংশ জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিচ্ছে।
চায়না ডায়ালগকে কো-অপারেটিভ সংগঠনগুলোর কারিগরি প্রধান গুস্তাভো এয়ারাসকা বলেন, ১৯৫৮ সালে আমাদের সংগঠন যাত্রা করে এবং দেশের গ্রামাঞ্চলে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। আমরা এ প্রকল্পে অগ্রগামী হতে চাই। শুরু থেকে আমাদের সংগঠন স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে চলেছে। বিভিন্ন সময়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে এবং এতে জনগণের অংশ নেয়ার হার বেশ সন্তোষজনক।
তাদের দেখাদেখি সান লুইস প্রদেশে ২০০ কিলোওয়াট, ৮৮০ প্যানেল ফটোভোলটেইক পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৫০টি পৃথক সোলার প্যানেল বিভিন্ন বাড়ির ছাদে বসানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, স্কুল, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি।