নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের পতন-উত্থানে বিভিন্ন খাতের কোম্পানির লম্ফঝম্ফ দেখা গেলেও তেমন কোনো সাড়া নেই জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর। লভ্যাংশের মৌসুম বা অন্য কোনো সুখবর না থাকায় এ খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এ কারণে লাভজনক হলেও বেশ কিছুদিন ধরে এ খাতের শেয়ারদরে নিম্নমুখী গতি লক্ষ করা যাচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলো বেশিরভাগ সময়ই লাভজনক। কারণ এসব কোম্পানি সঙ্গে সরকারেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিতে ঝুঁকি কম। এ খাতে তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানির মৌলভিত্তিও ভালো। তবে জ্বালানি খাতে কিছু কোম্পানির শেয়ারদর অতি মূল্যায়িত হয়ে পড়ার কারণে এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এটাকে দর সংশোধনও বলা যায় বলে মনে করছেন তারা।
তবে কেউ কেউ বলছেন, বাজার স্বাভাবিক গতিতে ওঠানামা না করায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা আবারও সংকটের দিকে যাচ্ছে। এতে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগের মোটিভ পরিবর্তন করেছেন। তারা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মতো শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন। এ কারণে জ্বালানি খাতের ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি থাকলেও সেগুলোর শেয়ারদরে ভাটা পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্যের চেয়ে জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। কারণ এসব কোম্পানির সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম তো আর কমছে না। তাতে মুনাফা না বাড়লেও কমার আশঙ্কা কম। তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর যদি অতি মূল্যায়িত হয়, অতীতে বেশি বেড়ে থাকে, তাহলে বর্তমান বাজারে এসব কোম্পানির দর সংশোধন হতে পারে।’
জ্বালানি খাতের কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সামিট পাওয়ারের শেয়ারদর ছিল ৪৪ টাকা ৪০ পয়সা, যা গতকাল কমে দাঁড়ায় ৪২ টাকা। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন এখন হাজার ৬৭ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে এক টাকা, আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯২ পয়সা।
জিবিবি পাওয়ারের শেয়ারদর গত ২২ ফেব্রুয়ারি ছিল ২৬ টাকা, দুদিন পরই কমে দাঁড়ায় ২৪ টাকা ৭০ পয়সা এবং গতকাল ২৫ টাকা ৪০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ৯৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। গত বছর কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়, যার লভ্যাংশের প্রকৃত হার (ইল্ড) দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ২৭ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১৩ পয়সা।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) শেয়ারদর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ছিল ৬১ টাকা ৭০ পয়সা। এরপর থেকে কোম্পানির শেয়ারদর বেশিরভাগ সময় কমেছে। গতকাল কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ৫৬ টাকা ৮০ পয়সায় বেচাকেনা হয়। কোম্পানিটি গত সমাপ্ত হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল, যার প্রকৃত লভ্যাংশের হার দাঁড়ায় ২ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির ইপিএস ছিল ৭৫ শতাংশ, আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬৮ পয়সা।
একই তারিখে সরকারি প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের শেয়ারদর ছিল ৫৯ টাকা ২০ পয়সা। এর মধ্যে দুদিন বাড়লেও অন্যান্য কার্যদিবসে দর কমেছে। গতকাল সর্বশেষ ৫১ টাকা ৩০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গত সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়, যার প্রকৃত লভ্যাংশের হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।
ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারদর গত ২০ ফেব্রুয়ারি ছিল ১৫১ টাকা ৩০ পয়সা, গতকাল কোম্পানির শেয়ার ১৪৭ টাকায় বেচাকেনা হয়। কোম্পানিটি গত সমাপ্ত হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের ১২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়, যার প্রকৃত লভ্যাংশের হার দাঁড়ায় ৮ টাকা ৪৫ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৮০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩৬২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৯৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৮২ পয়সা।