জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিপিএমআই) আয়োজিত এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, মূল্য সমন্বয় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে এখনও কিছু নির্ধারিত হয়নি। যেভাবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বাড়ছে, সেটা খুব অস্বাভাবিক। আমাদের চিন্তা করতে হবে এই অবস্থা কত দিন চলবে। বিপিসি প্রতিদিন শতকোটি টাকা লোকসান গুনছে।
প্রয়োজন হলে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হতেই পারে। তবে তা প্রথমেই নয়। সম্ভাব্য সব বিকল্প পন্থা প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের পর যদি মনে হয়, সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, কেবল তখনই দাম বাড়ানো যেতে পারে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে কোন খাতে কী অভিঘাত পড়বেÑসেটি যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে স্থানীয়ভাবে সব ধরনের সেবা ও পণ্যের মূল্যের দাম বাড়বে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে মূল্যস্ফীতির হার। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক অর্থনীতিতে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে প্রথম ধাক্কায় পণ্যের পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবে। দ্বিতীয় দফায় বাড়বে গণপরিবহন ব্যয়। এর পাশাপাশি বাড়বে সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। এ অবস্থায় বিনিয়োগ করে উৎপাদনে যেতেও খরচ বাড়বে।
অর্থনীতিবিদরা জ্বালানি তেলের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকি দিয়ে হলেও বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। দাম বাড়ালে বাজারে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তার মোকাবিলা করা কঠিন হবে। বিভিন্ন নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এ অবস্থায় সরকারের নীতির কারণে পণ্যমূল্য আরও বাড়লে ভোক্তাদের জন্য তা অসহনীয় হয়ে উঠবে।
জ্বালানি তেল হলো অর্থনীতির জীবনীশক্তি (লাইফ লাইন)। প্রায় সব ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জ্বালানি তেলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় সব পণ্যেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে তেল। এর দাম বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। তখন আসবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রশ্ন। বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব খাতেই এর প্রভাব পড়বে।
আমরা মনে করি, জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল থাকলে লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি ও জনগণ। কেননা শিল্পের উৎপাদন খরচ কমলে বাজারে তার প্রভাব পড়বে, জীবনযাত্রার ব্যয়ও কমবে। এর দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এসব খাতের পণ্যমূল্য বাড়বে। বাধ্য হয়ে ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। তখন জ্বালানি তেলের কারণে মূল্যস্ফীতিতে চাপ আরও বাড়বে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এখন তেলের দাম বাড়লে ভয়ংকর অবস্থা হতে পারে। এ অবস্থায় সরকারকে জনগণের পাশে থেকে সুরক্ষা দেয়া উচিত। তাই জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেই প্রত্যাশা।