সিপিডির প্রতিক্রিয়া

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো একটি ভুল সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিন তেলের লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করে সরকার। এ দাম বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং জনগণের প্রতি সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি মনে করে, ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিপণ্য উৎপাদনের ব্যয়ও বাড়বে। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় আরেক দফা বাড়বে। পাশাপাশি সার্বিকভাবে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ হ্রাস পেতে পারে। এতে করে ডিজেল বিক্রি করে মুনাফা হলেও অন্যান্য খাত থেকে সরকারের আয় কমে যাবে। কাজেই এ মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করে সিপিডি।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির নিজস্ব কার্যালয়ে গতকাল ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কতটুকু প্রয়োজন ছিল?’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি এ কথা জানায়। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন সংস্থাটির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, সিপিডির ডায়ালগ ও আউটরিচ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্যসহ অন্যান্য গবেষক।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ানো সরকারের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং এ সিদ্ধান্ত নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তাছাড়া প্রতিবেশী দেশ বা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনার মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে বৈধতা দেয়ারও সুযোগ নেই। কারণ ভারতসহ অন্যান্য দেশে জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে স্বয়ংক্রিভাবে সমন্বয় করা হয়, যে ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই। তাছাড়া হঠাৎ করে তেলের দাম বেড়ে গেলে দেশে অর্থনীতি এ বর্ধিত দামের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না। এতে করে নানা খাতে উৎপাদনশীলতা বিঘ্নিত হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত বেশ কয়েক বছর জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল। সে সময় কিন্তু দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করা হয়নি। তখন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) মুনাফা করেছে। গত কয়েক বছরে বিপিসি ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছে। এর মধ্য থেকে আইন করে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে স্থানান্তর করেছে। আর বাকি অর্থ যাতে সরকার নিতে না পারে সে জন্যই হয়তো তা বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে বিপিসি।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর পর মহাশক্তিধর রাষ্ট্র দুদিনের ধর্মঘটের কাছে নতি শিকার করে যানবাহনের ভাড়া বাড়িয়ে দিল। যে প্রক্রিয়ায় পরিবহন মালিকরা জ্বালানির দাম যাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিল, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রক্রিয়ায় পরিবহন মালিকরা নিজেদের চাপটা ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিল। কিন্তু ভোক্তারা তো অন্য কারও ওপর তা চাপাতে পারবে না। আর তেলের দাম বৃদ্ধির অভিঘাতের কারণে যে প্রভাব পড়বে, তাতে অন্যান্য খাত থেকে সরকারের আয় কমে যাবে।

মূল প্রবন্ধে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় না করার কারণে ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বিপিসি ৪৩ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। এ ছাড়া বিপিসির মাধ্যমে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, আয়কর ও লভ্যাংশের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করে। কাজেই এ মুহূর্তে দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তিই ছিল না। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে যে পরিমাণ লোকসান হয়, তা সরকার ভর্তুকি আকারে জোগান দিয়ে অর্থনীতির গতি জোরদার রাখতে পারত। তিনি বলেন, জ্বালানি তেল একটি কৌশলগত পণ্য। এটির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে অন্য অনেকগুলো অনুসঙ্গ সংযুক্ত। কাজেই ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষি উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে। কারণ কৃষিতে ব্যবহƒত বিভিন্ন যন্ত্র ডিজেলচালিত। এছাড়া পরিবহন ভাড়া বাড়বে, পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়বে, রেলের পরিচালন ব্যয় বাড়বে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এবং জলযানের ব্যয়ও বাড়বে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির ফলে তাদের নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি করলে বছরে বিপিসির লোকসান হতো ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো। এ অর্থটা সরকার ভর্তুকি হিসেবে দিতে পারত। দাম না বাড়িয়ে তেলের বাড়তি দাম সমন্বয়ের অনেকগুলো বিকল্প সরকারের হাতে ছিল। কিন্তু সরকার সেসব বিকল্প অনুসরণ না করে দাম বৃদ্ধির সহজ উপায় বেছে নিয়েছে। এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির উপযুক্ত সময় নয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০