নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর তার প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারেও। এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে শাকসবজিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম। রাজধানীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, দু-একটি ছাড়া অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়তি। মুদি দোকান থেকে শুরু করে মাছ বিক্রেতা সবাই বলছেন, সব জিনিসের দাম বেড়েছে। পণ্যের বাজারে জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে ব্যয় সামাল দিতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
প্রায় সব ধরনের সবজির দামই কম-বেশি বেড়েছে। টমেটোর দাম কেজিতে এক লাফে বেড়েছে ৪০ টাকা। টমেটো এখন ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এক সপ্তাহে ৪০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা ছুঁয়েছে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে। বর্তমান দাম ২০০ টাকা কেজি। শুধু ব্রয়লার মুরগিই নয়, বেড়েছে পাকিস্তানি কক-মুরগির দামও। গত সপ্তাহেও পাকিস্তানি ককের দাম ছিল ২৪৫-২৫০ টাকার মধ্যেই। শুক্রবার (১২ আগস্ট) কক বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৭৫ টাকায়।
বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ২০০ টাকা। তবে কেউ কেউ ১৯০ টাকা কেজিও বিক্রি করছেন। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা কেজি।
রাজধানীর মানিক নগর এলাকার ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম বলেন, পাইকারিতে প্রতিদিনই ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ছে। তাই বাধ্য হয়ে তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এখন বাজারে এমনিতেই ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম। এর সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম এমন বেড়ে গেছে।
এদিকে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও। ডজনে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। প্রথমবারের মতো ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিমের দাম ১৪৫ টাকায় উঠেছে। আর মুদি দোকানে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। রাজধানীর গোপীবাগ এলাকার ব্যবসায়ী রবিউল করিম বলেন, গত সপ্তাহে এক ডজন লাল ডিম ১২৫ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন ১৪৫ টাকা বিক্রি করছি।
এছাড়া বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ও পাম-অয়েল কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। গতকাল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। বোতলজাত সরষের তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। বেড়েছে পাম-অয়েলের দামও। গত সপ্তাহে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এক কেজি পাম-অয়েল। শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।
নাজির ও মিনিকেট চালের দামও বেড়েছে কেজিতে তিন টাকা। গত সপ্তাহে ৭৫ টাকা কেজি দরের চিকন চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৮ টাকায়। শুধু তা-ই নয় ‘গরিবের মোটা চাল’ এখন ৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৫০ টাকা। এছাড়া মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৬ টাকা।
এদিকে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকার মতো। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। একইভাবে গত সপ্তাহে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে যে দেশি রসুন ৮০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।
সবজির বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। ২৫০ গ্রাম শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এক কেজি কিনলে ১৯০ টাকা রাখা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম শিম বিক্রি হয় ৪০ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এখন ১০০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাজর গত সপ্তাহের মতো ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটিও গত সপ্তাহের মতো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শসার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হওয়া শসা এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেগুন ও কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা ও পটোলের কেজি ৫০ টাকা। কচুর লতি, ঝিঙা ও চিচিঙ্গার দর কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
আগের সপ্তাহের মতোই রয়েছে আলুর দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমে কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০০ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকায়। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকায়। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকায়। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ইলিশও। এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি করা হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।