নিজস্ব প্রতিবেদক: অকটেন, পেট্রল, ডিজেলসহ জ্বালানি তেলে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি লিটারে এই মুহূর্তে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমানোর সুযোগ আছে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সিপিডি বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল কেনার পর বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতি লিটার ডিজেলে পাঁচ টাকা এবং প্রতি লিটার অকটেনে ১৩ টাকা মুনাফা করে।
দেশের অর্থনীতির বর্তমান হালচাল নিয়ে গতকাল সংস্থাটির রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি ২০২২-২৩: তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি এ কথা জানায়। এতে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
সিপিডি বলেছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত এই সাত বছরে বিপিসি মোট ৪৩ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা লাভ করেছে। কর দেয়ার পর নিট মুনাফা ৩৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। আর এই সময়ে সাত হাজার ৭২৭ কোটি টাকা কর দিয়েছে বিপিসি।
এ বিষয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি খাতে বেশি ভর্তুকি দিয়েছে। এখানে এখন কিছু করা যেতে পারে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ে, তখন দেশের বাজারের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে, তখন স্থানীয় বাজারে দাম কমানো হয় না।
এ বিষয়ে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, জ্বালানি তেলের ওপর আমদানি পর্যায়েই নানা ধরনের শুল্ক-কর আরোপ করা হয়েছে। এটি গ্রাহক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে মোট ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ শুল্ককর পরিশোধ করতে হয়। এই শুল্ককর হ্রাস করা হলে তেলের দাম
অনেকখানি কমে আসবে। তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে, বিদ্যমান বাস্তবতায় যদি কোনো কিছু পরিবর্তন নাও করা হয়, তাও জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমানো সম্ভব।’ তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি আমদানি পর্যায়ে জ্বালানি তেলের পর আগাম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু এটি বাজারে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ আমদানি পর্যায়ে প্রত্যাহার হলেও পরবর্তী আরেক ধাপে তা সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে ভোক্তার ব্যয় কমবে না। তেলের দাম কমানো হলে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি রাতারাতি অনেকটা কমে আসবে বলে জানায় সিপিডি।
বাংলাদেশে গত আগস্ট মাসে হঠাৎ অকটেন, পেট্রলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৩৩ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়। বৃদ্ধির ওই হার ছিল গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপর গ্যাস-বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়। এ ছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্যে বেশি দামে আমদানি করতে হয়েছে।