জ্বালানি তেলের বাজার যেন অস্থির না হয়

এ ভালো অর্থনীতির বাজার ব্যবস্থার আদর্শ মডেল হচ্ছে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা। সাধারণত বাজার প্রতিযোগিতামূলক হলে সেখানে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হওয়ার নজির রয়েছে। বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বাজার থেকে যেভাবে বাড়তি মুনাফা তুলে নেয়, সেসব ঘটনা বাংলাদেশে অহরহ সংঘটিত হয়ে থাকে। আর বাজারে কিছু কৌশলগত পণ্য রয়েছে, যেগুলো বাজারের অন্যান্য পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তেমনই একটি পণ্য হচ্ছে জ্বালানি তেল। এ পণ্যটি দেশের সার্বিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে এটির দাম যদি বেড়ে যায়, তাহলে বাজারের অন্য সব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এমন ঝুঁকি এড়ানোর জন্যই হয়তো এত দিন জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিপণনের একক দায়িত্ব পালন করে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তবে এখন থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে কোনোভাবেই এই কৌশলগত পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে সজাগ থাকতে হবে।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘রিফাইনারি স্থাপন ও তেল বিপণন নীতিমালা জারি: বিদ্যুতের পর জ্বালানি তেলের ব্যবসা যাচ্ছে বেসরকারিতে!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কোম্পানিগুলো তেল আমদানির পর তা পরিশোধন করে বাধ্যতামূলকভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিপিসিকে সরবরাহ করবে। বিপিসি সেটি বিপণন করবে। এর বাইরে কোম্পানিগুলোও পরিশোধিত তেলের কিছু অংশ বিক্রি করতে পারবে। এমন ব্যবস্থার প্রচলন হলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইস্টার্ন রিফাইনারির অলস বসে থাকা লাগতে পারে। কারণ নীতিমালায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল কেনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাত যেন কোনোভাবেই দেশের সার্বিক জ্বালানি খাতের নিয়ন্তা হয়ে না ওঠে, সে বিষয়ে নজর রাখা আবশ্যক।

এর আগে এলপিজি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হয়েছে। এ খাতে বেশকিছু কোম্পানি বিনিয়োগও করেছে। তবে এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানির বিধান ছিল আগে, যা সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে। ফলে এখন সরকার চাইলে যে কোনো সময় কোনো ধরনের গণশুনানি ছাড়াই এসব পণ্যের দাম বাড়াতে পারে। বেশ কয়েকবার শুনানিতে এলপিজি ও সিএনজির দাম বাড়ানোর বিষয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তা সত্ত্বেও দাম বাড়ানো হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ ভোক্তারা সমস্যায় পড়বেন বৈকি। আবার তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা বলেও সেটি কার্যকর করা হয়নি। সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি হলে সেই অজুহাতে দেশের বাজারে বাড়ানো হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম হ্রাস পেলে সে অনুযায়ী দাম কমানো হয় না। এক্ষেত্রে ন্যায্যতার প্রতিষ্ঠা পায় না। কাজেই নতুন করে বেসরকারি খাতকে যে জ্বালানি তেল সরবরাহ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে, এতে বাজারে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে বিষয়ে সজাগ থাকা আবশ্যক। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০