জ্বালানি তেল নিয়ে মেঘনায় ডোবা জাহাজ উদ্ধারে বিলম্ব

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভোলার মেঘনা নদীতে ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে ডুবে যাওয়া ‘সাগর নন্দিনী-২’ জাহাজটির উদ্ধার কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। এ অবস্থায় তেল নদীতে ছড়িয়ে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা। ডুবে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল সোমবার সকাল থেকে জাহাজটি উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাজ শুরুর কথা থাকলেও তা হয়নি।

ঘটনাস্থলে থাকা বিআইডব্লিউটিএর নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘সাগর নন্দিনী-২’ উদ্ধারের মতো জাহাজ তাদের নেই। তাই উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য বেসরকারি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

‘বেসরকারি কোম্পানির একটি ট্যাংকার ও কোস্টার এখন ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে। তারা কাল মঙ্গলবার থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করবে বলে আশা করা যায়। বিআইডব্লিউটিএ এ উদ্ধার কাজে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।’

বিআইডব্লিউটিএর আরেক যুগ্ম পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা সকালে উদ্ধারকাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ‘সাগর নন্দিনী-২’ জাহাজের যে ওজন সেটি উদ্ধার করার সক্ষমতা বিআইডব্লিউটিএর নেই। তাই আমরা মালিকপক্ষকে বলেছি, তারা যেন বেসরকারি কোম্পানির জাহাজ দিয়ে এটি উদ্ধারের চেষ্টা চালান। তারা সেভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।’ 

বেসরকারি কোম্পানির উদ্ধারকারী জাহাজ ‘সাগর বধূ-৩’ ভোরে ঘটনাস্থলে এলেও তারা উদ্ধারকাজ শুরু করতে পারেনি। 

ডুবে যাওয়া জাহাজ ‘সাগর নন্দিনী-২’-এর কোম্পানির প্রতিনিধি মো. মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘১১ লাখ লিটারের বেশি জ্বালানি তেল নিয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজটির ওজন প্রায় ৪৪০ মেট্রিন টন। সোমবার ভোররাতে ‘সাগর বধূ-৩’ নামে কোম্পানির একটি উদ্ধারকারী জাহাজ এসেছে। সেটির ওজন প্রায় ৩৪০ মেট্রিক টন। এই জাহাজ দিয়ে এটিকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়।

তাই কোম্পানি তাদের আরেকটি উদ্ধারকারী জাহাজ ‘সাগর বধূ-৪’ ঘটনাস্থলে পাঠাচ্ছে। সেটি এলে তারপর উদ্ধার কাজ শুরুর পরিকল্পনা করা হবে।

শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জ্বালানি তেল লোড করে জাহাজটি চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে যাওয়ার কথা ছিল। রোববার ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যে তোলাতুলির কাঠিরমাথা এলাকায় বালুবাহী একটি বলগেটের সঙ্গে জাহাজটির সংঘর্ষ হয়। এতে জাহাজটি তলা ফেটে পানি ঢুকতে থাকে এবং একপর্যায়ে সেটি ডুবে যায়।

জাহাজে মোট ১৩ স্টাফ ছিলেন। পরে তাদের চিৎকার শুনে অন্য একটি বলগেট এসে তাদের উদ্ধার করে। জাহাজের স্টাফরা অভিযোগ করেন, স্থানীয় জেলেরা এসে জাহাজের তেল সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। কিছু তেল মেঘনায় ছড়িয়েও পড়ে। এতে নদীর দূষণ বাড়ছে, পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তেল সাগরে চলে যেতে পারে বলে পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

জাহাজটির তেলের মালিক পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাজে ১১ লাখ লিটার ডিজেল ও অকটেন ছিল। এর মধ্যে ডিজেল আট লাখ ৯৮ হাজার লিটার এবং দুই লাখ ৩৪ হাজার লিটার অকটেন ছিল, যার বাজারমূল্য ৯ কোটি টাকার বেশি।

সেই তেল নদী ও সাগরে যাতে দূষণ না ছড়ায়, সেজন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ‘সাগর নন্দিনী-২’-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোস্ট গার্ডের দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা কেএম শফিউল কিঞ্জল।

তিনি বলেন, ‘নদীতে কোনোভাবে যাতে দূষণ না ছড়ায় সেজন্য কোস্ট গার্ডের অত্যাধুনিক নিষ্কাশন যন্ত্র দিয়ে পানি থেকে তেল পৃথক করার কাজ চলমান রয়েছে। জাহাজের ভিতরের ট্যাঙ্কিতে যে তেল রয়েছে, তা পদ্মা অয়েল কোম্পানি সরিয়ে নেবে।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আবদুস সালাম জানান, তেল ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে কোস্ট গার্ড কাজ করছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০