Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 3:49 am

জ্বালানি তেল বিক্রিতে গরমিল ১৫.৫৫ লাখ মেট্রিক টনের

ইসমাইল আলী: দেশে জ্বালানি তেল আমদানির সঠিক কোনো তথ্য নেই। কারণ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র সরাসরি তেল আমদানি করে। এছাড়া তেলের চাহিদার সঠিক হিসাবও নেই। জ্বালানি বিভাগ এক হিসাব দিচ্ছে, বিপিসি দিচ্ছে আরেক হিসাব। ফলে জ্বালানি তেল বিক্রির সঠিক তথ্যও পাওয়া যায় না। বর্তমানে দুই হিসাবে গরমিল প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ মেট্রিক টনের, যার বাজারমূল্য কয়েকশ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা-বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) প্রকাশিত ‘এনার্জি ডেটা ম্যানেজমেন্ট: চ্যালেঞ্জেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের ভুলের তথ্য বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। গত সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি বিক্রির ভিন্ন ভিন্ন হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর বিপিসির হিসাবে দেশে আট ধরনের জ্বালানি পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে ওই আট ধরনের জ্বালানি পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪৬ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩৯ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দুই হিসাবের পার্থক্য ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন। এতে বিপিসির হিসাবে জ্বালানি বিক্রি বেশি দেখানো হয়েছে ২৫ দশমিক ১০ শতাংশ।

ওই অর্থবছর দেশে সবচেয়ে বিক্রি হয়েছে ডিজেল। বিপিসির হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছর ডিজেল বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন। তবে জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এর পরিমাণ ছিল ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৪৪ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এ জ্বালানি তেল বিক্রিতে পার্থক্য ছিল ৯ লাখ ১১ হাজার ৭৪১ মেট্রিক টন।

এরপর রয়েছে ফার্নেস অয়েল বিক্রি। ওই অর্থবছর বিপিসির হিসাবে ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ৩২ মেট্রিক টন। তবে জ্বালানি বিভাগের হিসাবে

এর পরিমাণ মাত্র ৪৭ হাজার ৯২৪ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দুই তথ্যে পার্থক্য পাঁচ লাখ ১১ হাজার ১০৮ মেট্রিক টন। এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছর বিপিসির হিসাবে অকটেন বিক্রি হয়েছে তিন লাখ তিন হাজার ৯১৭ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এর পরিমাণ দুই লাখ ১৯ হাজার ৬৮১ মেট্রিক টন। অর্থাৎ অকটেন বিক্রিতে পার্থক্য ৮৪ হাজার ২৩৬ মেট্রিক টন। এ তিন ধরনের জ্বালানি পণ্যের বিক্রি বেশি দেখিয়েছে বিপিসি।

পার্থক্যের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে পেট্রোল। তবে এটির বিক্রি বেশি দেখিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। বিপিসির হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছর পেট্রোল বিক্রির পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন। তবে জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এর পরিমাণ ছিল চার লাখ ১২ হাজার ৬৬১ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এ জ্বালানি তেলের বিক্রিতে পার্থক্য ছিল ৩৩ হাজার ৮১৫ মেট্রিক টন। একইভাবে এলপিজির বিক্রি বেশি দেখিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। তাদের তথ্যমতে, ওই অর্থবছর এলপিজি বিক্রির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৯ মেট্রিক টন। আর বিপিসির হিসাবে এলপিজি বিক্রির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন। দুই তথ্যের মাঝে পার্থক্য ৫১৯ মেট্রিক টনের।

যদিও কেরোসিন ও জেট ফুয়েলের বিক্রি বেশি দেখিয়েছে বিপিসি। এর মধ্যে বিপিসির হিসাবে ওই অর্থবছর কেরোসিন বিক্রির পরিমাণ ছিল এক লাখ এক হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন। তবে জ্বালানি বিভাগ বলছে কেরোসিন বিক্রির পরিমাণ মাত্র ২৫ হাজার ৩৩৮ মেট্রিক টন। এ জ্বালানি পণ্য বিক্রির তথ্যে পার্থক্য ৭৬ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টনের।

এদিকে বিপিসির হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছর জেট ফুয়েল বিক্রির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৪ আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে দুই লাখ ৩৫ হাজার ৭১১ মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে পার্থক্য দুই হাজার ১৮৩ মেট্রিক টনের। একইভাবে তারপিন তেল (এমটিটি) বেশি দেখিয়েছে বিপিসি। সংস্থাটির তথ্য বলছে ওই অর্থবছর দেশে তারপিন বিক্রির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগ বিক্রি বলছে বিক্রির পরিমাণ ছিল তনি হাজার ৫২ মেট্রিক টন। অর্থাৎ তারপিন বিক্রি বেশি দেখানো হয়েছে ৭৩৮ মেট্রিক টন। প্রতিবেদনটির প্রণেতা বিডব্লিউজিইডির সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, বিপিসি ২০২০-২১ অর্থবছর ফার্নেস অয়েল বিক্রির পরিমাণ দেখিয়েছে পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ৩২ মেট্রিক টন। যদিও বাস্তবে এ জ্বালানিটি বিক্রির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। কারণ ২০১৭ সালে সরকার বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ফার্নেস অয়েল সরাসরি আমদানির সুযোগ দেয়। বর্তমানে তাদের বেশিরভাগই তেল আমদানি করছে, কিন্তু এর সঠিক তথ্য কোথাও নেই। এতে জ্বালানি তেলের সম্ভাব্য চাহিদা ও জোগান নিয়ে কোনো পূর্বাভাস দেয়া যায় না, যা এ খাতে সমস্যা তৈরি করছে।