প্রতি বছর বিশ্বে ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য ধ্বংস করা হয়। এর মাত্র ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রথাসিদ্ধভাবে রিসাইকেল হয়। তথ্যটি দিয়েছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি। তবে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। কেননা ই-বর্জ্য বিনষ্ট করা সব দেশের জন্যই চ্যালেঞ্জের।
বিশ্বের প্রায় সব দেশই ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি বা রফতানি করে থাকে। কাজ ফুরোলে এসব পণ্য সমপরিমাণ আবর্জনায় পরিণত হয়। অর্থাৎ দেশে দেশে যে পরিমাণ প্রযুক্তিপণ্য আমদানি করা হয়, ঠিক সে পরিমাণ বর্জ্যও তৈরি হয়। দুশ্চিন্তার বিষয়, এর বেশিরভাগ রিসাইকেল হয় অপ্রচলিত পদ্ধতিতে। অনেক প্রযুক্তিবিদ একে বিপজ্জনক পদ্ধতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আর এ বিষয়টিই পরিবেশবিদদের উদ্বেগের অন্যতম কারণ। কেননা এ ধরনের বর্জ্য সঠিকভাবে নষ্ট করা না হলে মানুষ ও পরিবেশের জন্য তা হুমকি হয়ে উঠবে।
উন্নয়নশীল দেশগুলো তো বটেই, অনেক উন্নত দেশ এখনও অনেকটা সেকেলে উপায়ে ই-বর্জ্য বিনষ্ট করে থাকে। ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ ই-পণ্য অন্য আবর্জনার সঙ্গে স্তূপ করা হয়। যা সুনিশ্চিতভাবে বাতাস দূষিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ধরুন, সেখানে ফিবছর মাত্র দুই শতাংশ ই-বর্জ্য ধ্বংস করা হয়। তবে তা ৭০ শতাংশ বায়ু বিষাক্ত করে তোলে। এ বাতাসের সংস্পর্শে আসার পর রক্ত ও কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। সাধারণত প্লাস্টিক ও পিভিসি পুড়িয়ে ফেলা হয়। এতে সিসা, পারদ,
ডাই-অক্সিন, ক্যাডমিয়ামের মতো ক্ষতিকর উপাদান তৈরি হয়। এ সবকিছু আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। একই সঙ্গে তা ঝুঁকিতে ফেলে দেয় পরিবেশকেও।
শুধু মার্কিনিরাই প্রতিবছর যে পরিমাণ সেলফোনের বর্জ্য তৈরি করে, তার বাজারমূল্য ৬০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। সঠিকভাবে রিসাইকেল করা হলে প্রতি এক মিলিয়ন রিসাইকেল সেলফোন থেকে ৩৫ হাজার ২৭৪ পাউন্ড কপার, ৭৭২ পাউন্ড সিলভার, ৭৫ পাউন্ড সোনা ও ৩৩ পাউন্ড পালাডিয়াম ফিরে পাওয়া যাবে। সুতরাং সব দেশের উচিত অনানুষ্ঠানিক রিসাইকেল বন্ধ করা। এজন্য যথাযথ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। সহজ ভাষায়, রিসাইকেল হতে হবে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব। গুরুত্ব দিতে হবে ভোক্তার চাহিদাকে। প্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানি তাদের পরিস্থিতি উন্নয়নের পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করে তুলবেÑএমন আশা করা যেতে পারে।
সব ধরনের ই-বর্জ্য যে নিষ্ফলা নয়, পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারেÑসে বিষয়ে ভোক্তাকে সচেতন করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মনে রাখা উচিত, অনেক দেশ এ ধরনের আবর্জনাকে জ্বালানির অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচনা করে। আমরাও তাদের অনুসরণ করতে পারি। তাই ই-বর্জ্য বিনষ্ট বা নষ্ট কথাগুলো এড়িয়ে আমরা বলতে পারি, ‘ই-বর্জ্য পরিষ্কার’। সমাজের সর্বস্তরের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কমে যেতে পারে নতুন ধরনের জনস্বাস্থ্যগত ঝুঁকি। তৈরি হতে পারে জ্বালানি শক্তির নতুন ধরনের উৎস।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যে আগামী ১৫ জুলাই ই-বর্জ্য সংগ্রহ অভিযান চলবে। সেদিন স্বেচ্ছায় জনসাধারণ তাদের ই-বর্জ্য পরিষ্কারের উদ্যোগ নেবে। আমাদের দেশের জন্যও এমন একটি দিনক্ষণ বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। পুরোনো ইলেকট্রিক পণ্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে ধ্বংস করে আমরাও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারি।
Add Comment