সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলমান গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটে ব্যাহত হচ্ছে সব ধরনের শিল্পোৎপাদন। ভারী শিল্প খ্যাত সিমেন্ট, ইস্পাত, সিরামিকস, তেল পরিশোধন, চিনি পরিশোধন, পোশাক উৎপাদন ও গাড়ি সংযোজনের কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দিনের অর্ধেক সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। এমনিতে বাজারের ভোগের পরিমাণ কম, যা নিয়ে উদ্যোক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রামের একটি ইস্পাত কারখানায় দিনে ৮০০ টন ইস্পাত পণ্য উৎপাদন সক্ষমতা আছে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও এলসি সংকটে কারখানাটির উৎপাদন দিনে ২০০ টনে নেমেছে। এর মধ্যে ডলার সংকটে কমেছে ৪০০ টন এবং বিদ্যুৎ সংকটে কমেছে আরও ২০০ টন। আর ২০০ টন উৎপাদন করে কোনো রকমে টিকে আছে। শিল্পোদ্যোক্তাদের মতো, চলমান দেশের ডলার সংকটে বেড়েছে বিদ্যুৎ সমস্যা। আর গরমের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে বাড়ছে অসহনীয় লোডশেডিং। এতে শিল্পকারখানার উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। এতে দীর্ঘমেয়াদে মন্দার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ বাদে)। বিদ্যুতের চাহিদা দিনে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্যাস থেকে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট, তরলীকৃত জ্বালানি (তেলভিত্তিক) থেকে এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে দুই হাজার ২৫০ মেগাওয়াট, সৌর ও পানিবিদ্যুৎ থেকে প্রায় ৪৫০ মেগাওয়াট এবং বাকিটা ভারত থেকে আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে ৯ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো সক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এসব সক্ষমতার বেশিরভাগই জ্বালানি সংকটে বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশজুড়ে আবারও বেড়েছে লোডশেডিং। কারণ চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। আজকালের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বড় সক্ষমতার এ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে এবং চলমান তাপপ্রবাহে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়তে থাকলে তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পিজিসিবি বলছে, বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনে বর্তমানে দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে। সংস্থাটি মূলত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করে।
বিপিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, দেশে আকস্মিকভাবে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়া এবং বৃহৎ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সংকটের পাশাপাশি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে বিদ্যমান ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি রাকিবুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের কারাখানায় দিনে আট ঘণ্টা কাজ হয়। এর মধ্যে চার ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। আর বাকি চার ঘণ্টা জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম চালানো হয়। এতে জ্বালানি ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। অথচ এখন কোনো অর্ডার নেই। তাই আমাদের উৎপাদন সচল রাখার জন্য সরকারের কাছে ভর্তুকি মূল্য ডিজেল চাই।
ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত শেয়ার বিজকে বলেন, বিদ্যুৎ সংকটে আমাদের প্রায় ২৫ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে এলসি ওপেন করা যাচ্ছে না। আবার গ্যাসের দাম তিনগুণ বেড়েছে। সবমিলিয়ে ব্যবসায় চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।