Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:26 am

জয়পুরহাটের গ্রামীণ জনপদের ভরসা কমিউনিটি ক্লিনিক

শামীম কাদির, জয়পুরহাট: জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ওপরই ভরসা করে থাকতে হচ্ছে জেলার গ্রামীণ জনপদের। ভালো মানের সেবা আর বিনা মূল্যে ওষুধ পাওয়ায় মানুষের আস্থা অর্জন করেছে এসব কমিউনিটি ক্লিনিক। জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, শিশুস্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রসূতিসেবা, টিকাসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাসেবা মিলছে এসব ক্লিনিকে। বর্তমানে জেলায় ১১২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে চালু রয়েছে ১০২টি। অবশিষ্টগুলোতেও জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চালুর চেষ্টা চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালসহ পাঁচটি উপজেলায় ১৪১ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এখন আছে মাত্র ৬৪ জন। ৭৭ জন চিকিৎসক সংকট নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে জয়পুরহাট জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে জেলা সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা ও প্রসূতিদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র মাতৃমঙ্গলে ১১ জন, পাঁচবিবি  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়জন, কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ জন, ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচজন, আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন ও জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে ১৪ জন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সামনে রোগীদের ভিড়। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছেন গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা। এসব ক্লিনিকে রোগ নির্ণয়ের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও রোগীদের মুখে রোগের বর্ণনা শুনে স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। বিনা মূল্যে কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা আর ওষুধ পাওয়ায় এসব ক্লিনিকই এখন ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষদের।

স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্লিনিকের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়েও শিশু নিবন্ধন, প্রসূতি নিবন্ধনসহ পরিবার পরিকল্পনার যাবতীয় সেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। আর এসব কারণে দিন দিন রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। জয়পুরহাট জেলার ১৩ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে জেলার ১১২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। প্রত্যেকটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বছরে প্রায় ৪০ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন বলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন করে দানশীল ব্যক্তি স্বেচ্ছায় পাঁচ শতক জমি দান করেন। ওই দানকৃত জমির ওপর সরকারিভাবে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা করে ব্যয়ে এসব ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়। প্রত্যেকটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য ১৩ থেকে ১৭  জনের  কমিউনিটি গ্রুপ ও ৫১ জনের সাপোর্ট গ্রুপ নামে দুটি গ্রুপ রয়েছে। পদাধিকার বলে গ্রুপ দুটির সভাপতি এলাকার ইউপি সদস্য। এছাড়া জমিদাতা ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির আজীবন সদস্য।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শ্যামপুর গ্রামের শেফালী বেগম, আলেয়া খাতুন ও মহির উদ্দিন জানান, তাদের হাতের কাছে চিকিৎসাসেবা পেয়ে তারা খুব খুশি। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের যে সেবা দেওয়া হয় তাতে গরিব মানুষের বেশ উপকার হচ্ছে। এটি তাদের জন্য ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে বলেও উল্লেখ করেন তারা।

ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সদস্য উজ্জ্বল হোসেন জানান, তিন হাজারেরও বেশি রোগীর জন্য ক্লিনিকে দুই মাসের ওষুধ বরাদ্দ দেওয়া হয়। অনেক সময় রোগীর চাপে দেড় মাসেই ওষুধ শেষ হয়ে যায়। এজন্য ওষুধের বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

জয়পুরহাট সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার রেজা বলেন, বর্তমানে অসহায় দরিদ্র রোগীদের জন্য এ চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক সংকট থাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ভালো সেবা দেওয়া হচ্ছে। আর সে কারণেই গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে জয়পুরহাটের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি।