জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন দিনের শুরুর বড় মঞ্চটা হয়তো আজই হয়ে যেতে পারে কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে। কেননা, গতকালই টাইগাররা শততম টেস্ট জয়ের সুবাস পেয়েছেন। দলটির এখন একটাই লক্ষ্য যত দ্রুত আজ সকালে শ্রীলঙ্কার বাকি দুই উইকেট তুলে নেওয়া যায়। সঙ্গে লক্ষ্যটা যেন থাকে নিজেদের ধরাছোঁয়ার মধ্যে। আপাতত ম্যাচের যে অবস্থা তাতে শততম টেস্ট জয়ের ইতিহাসের সাক্ষী হতে মুশফিকদের ডাকছে ইতিহাস।
শততম টেস্টে জয়ের রেকর্ড আছে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আজ বাংলাদেশ জিতলে ইতিহাসের চতুর্থ দল হয়ে সেই গল্প নতুন করে লিখবে। গতকাল টাইগার বোলাররা ২৬৮ রানে শ্রীলঙ্কার ৮ উইকেট তুলে নিয়েছেন। সফরকারীদের প্রথম ইনিংসে ১২৯ রানের লিড পার করে স্বাগতিকরা এখন এগিয়ে ১৩৯ রানে।
গতকাল অলআউট হতে গিয়েও হলো না শ্রীলঙ্কা। দলটির লেজের দিকের দুই ব্যাটসম্যান দিলরুয়ান পেরেরা (২৬) ও সুরঙ্গা লাকমাল (১৬) গলার কাঁটা হয়ে থাকলেন বাংলাদেশের। বারবার বোলারের পরিবর্তন করেও এ জুটিকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি টাইগার টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
দিনের শেষ ওভারে পেরেরা-লাকমাল জুটি ভাঙতে মুশফিক বোলিংয়ে আনলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। ওই ওভারের শেষ বলে লাকমালকে লেগ স্টাম্পে পিচ করা বলে ব্যাট-প্যাড হয়ে ক্যাচ চলে যায় ইমরুল কায়েসের হাতে। কিন্তু আম্পায়ার আলিমদার আউট না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু চলতি সিরিজে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার না থাকায় এ যাত্রায় বেনিফিট অব দ্য আউটে বেঁচে যান ব্যাটসম্যান। তাতে কিছুটা হতাশা নিয়েই সাজঘরে ফেরেন টাইগাররা।
কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে গতকাল সকাল থেকেই দারুণ বোলিং করেন সাকিব আল হাসান-মোস্তাফিজুর রহমানরা। দিনের দ্বিতীয় ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজের প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান উপুল থারাঙ্গা। লাঞ্চের আগে আর কোনো উইকেটের দেখা পায়নি সফরকারীরা। দ্বিতীয় উইকেটে দিমুথ করুণারত্নে ও কুশল মেন্ডিসের ৮৬ রানের জুটি স্বাগতিকদের লিড এনে দেয়। কিন্তু বিরতির পরই পাল্টে যায় টাইগাররা। বিশেষ করে মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বিতীয় স্পেল। দ্রুত সময়ের মধ্যে কুশল মেন্ডিস ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান দিনেশ চান্দিমালকে মুশফিকের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান তিনি। কিছুক্ষণ পরই সাকিব ফেরান গুনারতত্নেকে। তাতে বেশ স্বস্তি ফিরে আসে টাইগার শিবিরে।
এক প্রান্তে নিয়মিত উইকেট হারালেও অন্য দিকে আগলে ছিলেন করুণারত্নে। এরই মধ্যে এ বাঁহাতি তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। তিন অঙ্কে পৌঁছে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। কিন্তু স্বাগতিকদের আবারও পথের কাঁটা হয়ে দেখা দিলেন সাকিব। দারুণ এক অফ কাটারে সৌম্যের হাতে করুনারত্নেকে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরালেন তিনি। কিছুক্ষণ পর হেরাথ ফিরে গেলেন তাইজুলের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকারে। শেষ পর্যন্ত নবম উইকেটে দিলরুয়ান পেরেরা ও সুরাঙ্গা লাকমাল ৩০ রানের জুটি বেঁধে কাটিয়ে দেন বেলা।
বাংলাদেশের হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান নেন ৩টি করে উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন মিরাজ ও তাইজুল।
এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, এখানে কত রানের টার্গেট পেলে ইতিহাস লিখবে বাংলাদেশ? কলম্বোর পি সারায় সর্বোচ্চ ৩৫২ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে। ২০০৬ সালের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া এই লক্ষ্যটা শ্রীলঙ্কানরা তাড়া করতে নেমেছিল চতুর্থ দিনে। মাহেলা জয়াবর্ধনের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে পঞ্চম দিনের লাঞ্চের ঘণ্টাখানিক পরই জয়ের দেখা পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। এছাড়া ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৫৭ রান টপকে জিতে যায় ভারত। এই মাঠে বেশিরভাগ টেস্টেই ফলাফল দেখেছে। তাই টাইগার ভক্তরা আজ আশা করতেই পারেন, শততম টেস্টে কিছু একটা করছে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৩৮
বাংলাদেশ: ১ম ইনিংস: ৪৬৭=
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ১৩ ওভারে ১০০ ওভারে ২৬৮/৮ (করুনারত্নে ১২৬, থারাঙ্গা ২৬, মেন্ডিস ৩৬, চান্দিমাল ৫, গুনারত্নে ৭, ডি সিলভা ০, ডিকভেলা ৫, পেরেরা ২৬*, হেরাথ ৯, লাকমাল ১৬*; শুভাশিস ০/৩৬, মিরাজ ১/৬৭, মোস্তাফিজ ৩/৫২, সাকিব ৩/৬১, মোসাদ্দেক ০/১০, তাইজুল ১/৩১)

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০