Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:35 pm

ঝালকাঠিতে চার বাহনকে ট্রাকের চাপা, নিহত ১৪

প্রতিনিধি, ঝালকাঠি: সড়কে বাড়ছেই মৃত্যুর মিছিল। প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। গত মঙ্গলবার ফরিদপুরে ১৫ জন নিহতের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় গাবখান ব্রিজের কাছে একটি ট্রাক তিনটি ইজিবাইক ও একটি প্রাইভেটকারকে চাপা দিলে শিশুসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ২টার দিকে ঝালকাঠির শহরতলির গাবখান ব্রিজের টোলপ্লাজায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

ট্রাকটির নিচে চাপা পড়া প্রাইভেটকার থেকে শিশুসহ সাত আরোহীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ইজিবাইকের চার আরোহী। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে একজন, বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, তিনজন নারী ও চারটি শিশু। এই ১৪ জনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আফরুজুল হক।

নিহত ১৪ জনের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেনÑঝালকাঠি সদরের গাবখান এলাকার নজরুল (৩৫), ওস্তা খান গ্রামের শফিকুল মাঝি (৫০), নওপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান (১১) ও ইমরান হোসেন (৪০), কাঁঠালিয়া উপজেলার তালগাছিয়া গ্রামের ইব্রাহিমের মেয়ে নুরজাহান (৭) ও প্রাইভেটকারের চালক ইব্রাহিম (৪০), পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার মেসন্ডা এলাকার সুবিদ আলী হাওলাদারের ছেলে মো. রুহুল আমিন (৭০) এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামনগর এলাকার বাদশা মিয়ার প্রতিবন্ধী ছেলে মো. শহীদুল ইসলাম (৩৫)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, টোল প্লাজায় টাকা দেয়ার অপেক্ষায় ছিল তিনটি ইজিবাইক, একটি পণ্যবাহী ছোট ট্রাক, একটি প্রাইভেটকারসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ সময় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সিমেন্টবাহী ট্রাকটি সেতুর দক্ষিণ দিক থেকে প্রচুর গতিতে টোল প্লাজার সামনে থাকা সব গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে প্রতিবন্ধক ভেঙে রাস্তার পশ্চিম পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রাইভেটকারটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। ট্রাকের ধাক্কা খাওয়া তিনটি ইজিবাইকে করে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন যাত্রীরা।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গাবখান টোল প্লাজার টোল আদায়কারী নাসির মৃধা বলেন, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সিমেন্টবাহী ট্রাকটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সেটি টোল প্লাজায় থেমে থাকা গাড়িগুলোর ওপর আছড়ে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

পরিবারের লোকজনের সঙ্গে বৌভাত অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন রুবেল হোসেন (৩০)। তিনি একটি ইজিবাইকে ছিলেন। দুর্ঘটনার শিকার হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। পরে তিনি আহত স্বজনদের নিয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন।

রুবেল হোসেন বলেন, ‘গাবখান ইউনিয়নের ওস্তকার মাঝি বাড়ি থেকে কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ছাগলকান্দা শশীর হাটে যাইতেছিলাম বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে। গাবখান ব্রিজ পার হইয়া চারডা অটো (ইজিবাইক) নিয়া যাইতেছিলাম। দুইটা অটো পাশ কইরা গেছে। দুইটা টোল দিতেছিল। পেছন থেকে ট্রাক আইসা আমরার ওই দুইটা অটো প্লাস আরও দুইটা অটোরে মাইরা দিছে। ব্রেক ফেইল কইরা মাইরা দিয়া ও নিজে গর্তে পইড়া গেছে।’

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত রুহুল আমিনের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার মেয়েজামাই গাবখানের বাসিন্দা হেমায়েত উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘ছাগলকান্দা আমরা ভাইঝি বিয়া দিছি। সেইখানে আমরা মেলা করছি (রওনা দিয়েছি)। আমরা সামনের গাড়িতে, তারা পিছের গাড়িতে, অটোতে। চারডা অটোতে মেলা করছি; দুইডা অটো সামনে গেছে। দুইডা পিছে টোল দেয়; আর ট্রাক আইয়া মাইরা দিছে। আমাগো লোক মারা গেছে পাঁচ-ছয়জন।’

ঝালকাঠির রামনগরের বাদশা মিয়ার ছেলে সাইদুল বলেন, ‘তার প্রতিবন্ধী ভাই শহীদুল (৪৫) গাবখানে ভিক্ষা করেন। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।’