Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:02 pm

ঝিনাইদহে কমছে তামাক চাষ

দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের কৃষকরা তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। গত কয়েক বছরের এক-তৃতীয়াংশ জমিতে এবার তামাক চাষ হয়েছে।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঝিনাইদহের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। ওই বছর এক হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। এরপর জেলায় তামাক চাষের পরিমাণ কমতে থাকে। গত তিন বছরে তামাক চাষ তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। চলতি মৌসুমে ৪৪৭ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১২ হেক্টর, মহেশপুরে ৬০ হেক্টর, শৈলকুপায় ১১০ হেক্টর এবং হরিণাকুণ্ডুতে ১৪৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তবে কোটচাঁদপুর উপজেলায় কোনো তামাক চাষ হয় না।

সদর উপজেলার পোড়াবকড়ি গ্রামের তামাকচাষি সাইদুর রহমান জানান, তামাক চাষ করতে হলে কোম্পানির সঙ্গে চাষাবাদের জমি ও তামাকের পরিমাণ নির্ধারণ করে আগে চুক্তি করতে হয়। এরপর তারা চাষিকে সার, বীজ ও কীটনাশক ঋণ হিসাবে প্রদান করে। তামাক বিক্রি করে আগে কোম্পানির ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয়। কখনও কম পরিমাণে উৎপাদিত হলে লক্ষ্য পূরণের জন্য ঘাটতি তামাক বাইরের চাষিদের কাছ থেকে কিনে পূরণ করতে হয়। তিনি আগে ১৪-১৫ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করলেও এখন ভুট্টা, কচু ও বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন।

মহেশপুরের বাঘাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, তামাক চাষের জন্য চাষিকে অধিক পরিমাণে পরিশ্রম করতে হয়। এতে কমপক্ষে ২১১ দিন পরিশ্রম করতে হয়। তাছাড়া তামাকচাষ স্বাস্থ্যের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে জমিতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় তিন-চারবার তামাক চাষ করার পর ওই জমিতে আর তামাক উৎপাদন করার মতো জৈবশক্তি থাকে না।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং অন্য লাভজনক ফসল সম্পর্কে জানতে পেরে তামাক চাষের দিক থেকে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জিএম আবদুর রউফ জানান, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, লাভজনক ফসল বা আবাদ সম্পর্কে ধারণা, সর্বোপরি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই তামাক চাষ কমে আসছে, যা কৃষক, কৃষি ও মাটির জন্য মঙ্গলজনক।