ঝিনাইদহে পাঁচ ভায়রার ছোট প্রকল্পে বড় স্বপ্ন

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ: আন্তরিকতা থাকলে যেকোনো কাজে যে সাফল্য পাওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিলেন এমএম গ্রিন ফিল্ড নামের কৃষি প্রজেক্টের উদ্যোক্তা পাঁচ ভায়রা। তাদের কৃষি প্রকল্পে নানা জাতের ড্রাগন চাষ শুরু করার মাত্র দুই বছরে এসেছে অভাবনীয় সাফল্য।

উদ্যোক্তা পাঁচ ভায়রা নানা পেশায় কর্মরত থেকেও কৃষির প্রতি হƒদয় নিংড়ানো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তাদের গড়ে তোলা কৃষি প্রকল্পে। তারা এখন শিক্ষিত ও বেকার যুবকদের অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়া বাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়াইল বাড়ি গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে এ প্রকল্প। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী জানান, তার মেঝ ভায়রা সাংবাদিক ও ইউটিউবার মিজানুর রহমান তাদের (ভায়রাদের) নানা সময় তার এলাকার (ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে) ড্রাগন বাগানে নিয়ে যেতেন। বাগান দেখতে দেখতে এক সময় বাগান করার ইচ্ছা জাগে তাদের। এরপর ২০১৯ সালের মে মাসে এক একর জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন তারা। চলতি বছর জুন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন তারা। বছর শেষ হওয়ার আগে আরও পাঁচ লাখ টাকার ফল বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তারা।

পাঁচ ভায়রার অন্য তিনজনের একজন ব্যাংকার মোত্তাসিম বিল্লাহ শিপলু। একটি নামকরা ফার্মাসিউটিক্যালসে চাকরি করেন আরেক ভায়রা রাহাত খান। আরেকজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাশিদুল ইসলাম। তারা এ প্রজেক্টে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। পেশা, কর্মস্থল ও আবাস ভিন্ন হওয়ায় তাদের খরচ তুলনামূলক বেশি হয়েছে। তবে তাদের আশা, চলতি বছরেই খরচের টাকা উঠে আসবে।

সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা গেছে, তাদের বাগানের বেশিরভাগ গাছে বেশ বড় ফল ধরছে। বাগানে রয়েছে লাল, সাদা, পিংক, আমেরিকান বিউটি ও হলুদ জাতের ড্রাগন। হলুদ ড্রাগনগুলো দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। উদ্যোক্তা লিয়াকত জানান, তার এক ভায়রা বিভিন্ন বাগান ঘুরে ভালো জাতের চারা সংগ্রহ করায় তাদের বাগানে ড্রাগনের ফলন ভালো হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন জাতের ড্রাগন থাকায় ও ফুলে পরাগায়ন করায় ফলের আকার বড় হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, অনেকটা শখের বশে বাগান করলেও এখন এ প্রকল্প কলেবরে বড় করতে চান। ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি প্রকল্পে বিনিয়োগের ইচ্ছে রয়েছে তাদের। তাদের এ বাগানে এক জনের স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে। তাকে ভালো অঙ্কের টাকা বেতন দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পাঁচ থেকে সাতজন লোকের অনিয়মিত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এখানে কয়েকজনের রুটি রুজির ব্যবস্থা হয়েছে, এতেই আমরা খুশি, জানান পরিচালকা মিজানুর রহমান।

লিয়াকত জানান, তাদের প্রজেক্টে ৬৪০টি খুঁটি রয়েছে। প্রত্যেকটিতে ফল এসেছে। তিনি আরও জানান, ড্রাগন একটি বহুবর্ষজীবী টেকসই ফল। খুঁটি পদ্ধতিতে একটি খুঁটিতে চারটি চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের পর ফল আসতে সময় লাগে মোটামুটি ১৮ মাস। ফল আসা পর্যন্ত খুঁটি প্রতি খরচ পড়ে গড়ে এক হাজার টাকা। একটি খুঁটিতে এক বছরে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কেজি ফল উৎপাদিত হয়, যার বাজারমূল্য গড়ে ২০০ টাকা কেজি।

ড্রাগনের মৌসুম শুরু হয় এপ্রিলে। একটানা নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফায় ফল আসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মাথায় ড্রাগন তোলা যায়। এক নাগাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মাস ফল সংগ্রহ করা যায়। ড্রাগন গাছে মূলত জৈব সার ও সেই সঙ্গে সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার, ছত্রাক দমনে রোবলাল, অ্যামিস্টার টপ জাতীয় ওষুধ ও পিঁপড়া দমনে সাইফারম্যাথিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হয়।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহিদুল করিম জানান, এমএম গ্রিন ফিল্ডের উদ্যোক্তাদের চাষ পদ্ধতি প্রশংসার দাবি রাখে। বিদেশি ফল ড্রাগন লাভজনক হওয়ায় অনেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

তিনি জানান, ক্যাকটাস গোত্রের এ ফলের গাছ দেখে সবাই একে সবুজ ক্যাকটাস বলে মনে করেন। সাধারণত মধ্য আমেরিকায় এর চাষ বেশি হয়। ড্রাগন দেখতে খুব আকর্ষণীয়। এর স্বাদ হালকা মিষ্টি। আমেরিকাসহ এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়। ড্রাগনে ক্যালোরি খুব কম থাকায় এ ফল ডায়াবেটিস ও হƒদরোগীদের জন্য ভালো। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও আয়রন রয়েছে। এটি দেহের চর্বি কমায় ও রক্তের কোলেস্টেরল কমানোসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। তাদের প্রকল্পে সহায়তা করতে কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে যোগ করেন তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০