নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে পাটের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। বৈরী আবহাওয়া আর অসময়ে বৃষ্টির কারণে এ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। জেলায় ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি জমির পাট কাটা শেষ হয়েছে। প্রত্যাশিত পরিমাণে পাটের আবাদ হলেও ফলনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার সামন্তা গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া জানান, এ বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছিলেন। বৃষ্টির কারণে একটি জমির পাট বড় না হওয়ায় শুরুর দিকে তা কেটে অন্য আবাদ করেছেন। দুই বিঘা জমিতে যে পাট ছিল তারও ফলন ভালো হয়নি। এ বছর পাট চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সদর উপজেলার পবহাটি গ্রামের কৃষক আলিম উদ্দিন জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে এ বছর পাটের আবাদ করেছেন। পাট বীজ, চাষাবাদ, সার প্রয়োগ, নিড়ানি, পাট পরিচর্যা, শ্রমিক খরচ, পাট জমি থেকে কেটে পানিতে জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ৩৪ হাজার টাকা। ২২ কাঠা জমিতে তিনি পাট আশা করছেন ১৩ থেকে ১৪ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৮ হাজার টাকা। পাটকাঠি বিক্রি হবে পাঁচ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে তার লোকসান হচ্ছে এক হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ‘আমার জমিতে অন্যদের তুলনায় পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবুও লোকসান হবে। তাহলে যাদের ফলন ভালো হয়নি তাদের কি পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে, সহজেই অনুমেয়।’
জেলার শৈলকুপা উপজেলার ভাটই গ্রামের পাটচাষি রাশেদ মোল্লা বলেন, বর্তমানে বাজারে পাটের দাম ১৬০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হলেও উৎপাদন কম হওয়ায় এবার লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছর জেলার ছয় উপজেলায় ২২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় পাঁচ হাজার ২২০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৬০০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৮২০ হেক্টর, মহেশপুরে তিন হাজার ২১০ হেক্টর, শৈলকুপায় সাত হাজার ৯৫০ হেক্টর ও হরিণাকুণ্ডুতে তিন হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
জানা গেছে, জেলায় পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৪৯৬ টন। পাটের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। কারণ হিসেবে কৃষকরা বলছেন, পাটের বাড়ন্ত সময় বৃষ্টির কারণে ফলন ভালো হয়নি।
শৈলকুপা উপজেলার উত্তর মির্জাপুর গ্রামের পাটচাষি রুহুল আমিন জানান, পাটবীজ জমিতে রোপণ করার পর পাটের চারা ভালো গজিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে পাটের গোড়ায় শেকড় গজিয়ে যায়। যে কারণে বাড়ন্ত কমে যাওয়ায় এবার ফলনও কম হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও পূরণ হচ্ছে না উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনার আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।