Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:56 pm

ঝিনাইদহে প্রদর্শনী প্লটে ফলেছে লাল তীর!

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ছত্রছায়ায় মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীরা বীজের জাত পাল্টে একটি বেসরকারি বীজ সরবরাহকারী কোম্পানির বীজ সরবরাহ করেছে গবেষণার বীজ হিসেবে। অথচ ছয় মাসেরও বেশি সময় পার হলেও বীজ পরিবর্তনকারী ওই মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি অধিদপ্তর। ফলে পরে এ ধরনের কাজ সরকারের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দেশীয় উন্নতমানের জাত প্রসারের জন্য বারি-১ (তাহেরপুরী) পেঁয়াজ বরাদ্দ হলেও প্রদর্শনী প্লটে উৎপাদন হয়েছে লাল তীর পেঁয়াজ। বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সরকারের বীজ উৎপাদন গবেষণাকে বিতর্কিত করতেই বারি-১-এর বদলে লাল তীর বীজ সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শৈলকুপা উপজেলা, ঝিনাইদহ জেলা বা যশোরের অতিরিক্ত পরিচালককে ব্যক্তিগত ও ফোনের মাধ্যমে অবহিত করা হলে উপজেলা কৃষি অফিসের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করেই প্রদর্শনী প্লটে এমন প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।

উল্লেখ্য, শৈলকুপা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের সাধুহাটি গ্রামের মাঠে উন্নত বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে গত অর্থবছরে কৃষি অফিস এক একর জমিতে বারি পেঁয়াজ-১ প্রদর্শনী প্লট তৈরি করে।

চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, ‘এসএএও কনোজ কুমার তাকে চাষাবাদে নানাভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে বারি পেঁয়াজ-১ বীজ উৎপাদনে উৎসাহিত করেন। কিন্তু সে সময় তথ্য গোপন করে বারি পেঁয়াজ-১-এর পরিবর্তে ৩৫ মণ লাল তীরের বীজ সরবরাহ করেন ওই কর্মকর্তা।’

জানা গেছে, প্রদর্শনী প্লট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে নিয়ে আসতে সাধুহাটি এলাকাবাসীকে নিয়ে চাষি পর্যায়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয়েছে। সে সময় বীজ প্লটের বাড়ন্ত গাছ দেখলেও কর্মকর্তারা লাল তীরের বিষয়টি অনুধাবন করেননি। পরে দিনে দিনে বিষয়টি প্রকাশ পায় এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকাসহ অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়।

একপর্যায়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সুযোগে অফিসকার্য সীমিত হওয়ার বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধুহাটি গ্রামের চাষি বাচ্চু মণ্ডল জানান, প্রদর্শনী প্লটে লাল তীরের বীজ আবাদ হয়েছে সবাই জানে। তবে কী কারণে বারি-১-এর সাইনবোর্ড তা সাধারণ চাষিদের বোধগম্য নয়।

একই এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম প্রশ্ন রেখে বলেন, আবাদ হয়েছে লাল তীর বীজ। অথচ কর্মকর্তারা বারি-১ (তাহেরপুরী) পেঁয়াজ বীজ ক্রয়ে উৎসাহ দেওয়ার নেপথ্য কি?

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মী (এসএএও) কনোজ কুমার জানান, অফিস থেকে সরবরাকৃত বীজই কৃষক মনিরুল ইসলামের প্লটে রোপণ করা হয়েছিল। তবে কীভাবে ওই প্লটে লাল তীর উৎপাদন হয়েছে সে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার কুণ্ডু জানান, বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ কৃষি বিভাগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো ব্যক্তির স্থুল কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারের কৃষি বিভাগের বীজ গবেষণাগার বিতর্কিত হবে, এর দায়ভার অফিস বহন করবে না। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। যে কোনো সময় তদন্ত রিপোর্ট জানা যাবে বলেও জানান তিনি।