ঝিনাইদহে বেড়েছে ফুলের দাম

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে অন্য সময়ের তুলনায় বর্তমানে দুই-তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ফুল। বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ঘিরে গত কয়েক দিনে স্থানীয় বাজারগুলোয় ফুলের দাম বেড়েছে। বাজারগুলোয় একটি গোলাপ পাইকারিতে ২৮ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, খুচরা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকায়। এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে একই গোলাপ বিক্রি হয়েছিল ৮ থেকে ১২ টাকায়। এছাড়া জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে বিক্রি হয়েছিল ৩ থেকে ৪ টাকায়। রজনীগন্ধা বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকায়, যা এক সপ্তাাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ২ থেকে ৩ টাকায়। তবে এ সময়ে গাঁদার দাম কমেছে। রোববার ও সোমবার গাঁদা ফুল ধোপাপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ক্ষেতে ফুটেছে লাল, হুলুদ ও কমলা রঙের জারবেরা। লাল, হলুদ ও সাদা রঙের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিয়াস ও গাদা ফুল ফুটেছে। এ ফুলের রঙে স্বপ্ন রাঙাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার ফুলচাষিরা। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে জেলার ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে এ এলাকায় উৎপাদিত ফুল ব্যবহƒত হয়ে থাকে। চলতি মাসে তরুণ তরুণীদের প্রাণের উৎসব বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এছাড়া রয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এসব দিবসের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা।

চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহে ২৬৮ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গোলাপ ২০ হেক্টর, গাদা ১৪৩ হেক্টর, রজনীগন্ধা ৬২ হেক্টর, জারবেরা ২১ হেক্টর, চন্দ্রমল্লিকা ১০ হেক্টর ও ৮ হেক্টর জমিতে গ্লাডিয়াস ফুলের চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফুলের চাষ হয় সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। এজন্য এ এলাকাটি অনেকের কাছে ফুলনগরী হিসেবে পরিচিত।

১৯৯১ সালে কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ সর্বপ্রথম ফুল চাষ শুরু করেন। তিনি ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এর পর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার শুরু হয়। বর্তমানে জেলার হাজারো কৃষক ফুলচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষি টিপু সুলতান জানান, ২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলাম। বর্তমানে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আমার ফুল রয়েছে। এর মধ্যে গোলাপ রয়েছে ৫ বিঘার মতো। ভালোবাসা ও বসন্ত উৎসব ঘিরে গত কয়েকদিনে গোলাপ পাইকারি ২০ থেকে ৩০ দরে বিক্রি করেছি। প্রতিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার গোলাপ ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছি।

কালীগঞ্জের মেইন বাসস্ট্যান্ড, বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও সদর উপজেলার গান্নার ফুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন পরিবহনে নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে।

বালিয়াডাঙ্গা বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, বর্তমানে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সারা বছরই ফুল বেচাকেনা হয়। তবে প্রতি বছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণের দিন ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও ভালো পাওয়া যায়।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপপরিচালক মো. আজগর আলী জানান, ঝিনাইদহের মাটি ও আবহাওয়া ফুলচাষের জন্য উপযোগী। এ বছর জেলায় ২৬৮ হেক্টর জমিতে গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল চাষ হয়েছে। ফুলচাষ এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে। ফুল পরিবহন ও সংরক্ষণ প্রশ্নে তিনি জানান, পদ্ম সেতু হওয়ায় সহজে ফুল ও কৃষি পণ্যবাহী গাড়ি ঢাকা চট্টগ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে। অপরদিকে ফেরিঘাটে ফুলবাহী গাড়ি আগে পারাপারের বিষয়ে জেলার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়া ফুল সংরক্ষণের জন্য বালিয়াডাঙ্গা বাজারে ফুল অ্যাসেম্বলি সেডের সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক রুম করা হয়েছে। যেখানে ফুল ও ফলের বীজ সংরক্ষণ করা যাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০