দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) শিল্প নগরীতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জায়গা না হলেও বড় শিল্প উদ্যোক্তারাই প্লট পেয়েছেন। ফলে ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হলেও বৃহৎ শিল্প মালিকরা ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠা করে তাদের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছেন। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন বিসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমন অভিযোগ স্থানীয় উদ্যোক্তাদের। অপরদিকে বিসিক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, নামে ক্ষুদ্র্র ও কুটির শিল্প সংস্থা হলেও জেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত শিল্পাঞ্চলের জন্য শুধুুু ক্ষুদ্র শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং বড় শিল্পকে অনুৎসাহিত করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, বিসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বেশ কয়েকটি বিশাল আঙ্গিকের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নির্ধারিত ঝিনাইদহ এস্টেটে প্লট বরাদ্দ নিয়ে বৃহৎ পরিসরে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। তারা বিভিন্ন নামে-বেনামে মোট প্লটের প্রায় অর্ধেকই বরাদ্দ নেওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হয়েছেন। তা ছাড়া, বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঝিনাইদহ বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন জুলিয়াস জানান, বিসিক শিল্পনগরীতে বৃহৎ পরিসরের শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কোনো সুযোগ না থাকলেও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিকরা বিসিকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ঝিনাইদহ শিল্প ও বণিক সমিতির পরিচালক মাহমুদুল ইসলাম ফোটন জানান, ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যাক্তাদের জন্য নির্মিত ছোট শহরের শিল্পনগরীতে বড় আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠা করে বিসিক কর্তৃপক্ষ নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন। ফলে ঝিনাইদহ বিসিক শিল্পনগরী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে মূলত বড় শিল্পনগরীতে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া বিসিক কর্তৃপক্ষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি।
বিসিকের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক কাইয়ুম মোল্লার সঙ্গে আলাপ করলে ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠায় তার সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে জানান, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা বা বিসিক বলতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের কুটির শিল্প সংস্থার নাম থাকলেও সেখানে বড় বা ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠায় কোনো বাধা নেই। তাই তারা শিল্পনগরীতে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠায় বাধা দিচ্ছেন না।
ওই কর্মকর্তা জানান, জমি ও ভবন বাদে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয়ে সক্ষম শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ক্ষুদ্র ও ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয়ে সক্ষম শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বলা হয়। ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বলে ঝিনাইদহে যাদের বিবেচনা করা হচ্ছে, সেগুলো মূলত মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করে এবেং পরে বৃহৎ আকার ধারণ করে।
ব্যাংকঋণ বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো উদ্যোক্তাকে ঋণ দেওয়া না দেওয়া ওই ব্যাংকের সম্পূর্ণ নিজস্ব এখতিয়ার। সেখানে বিসিকের কোনো ভূমিকা নেই।
বিসিক ঝিনাইদহ এস্টেট সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে ঝিনাইদহ পৌর শহর থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বদিকে ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কের পাশে ধানহারিয়ায় ১৫.৭ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরী নির্মাণকাজ শুরু হয়ে তা দুবছরে শেষ হয়। মোট ৯৮টি প্লটের সব বরাদ্দ হয়ে গেছে। এখানে ৬১টি এ-টাইপ, ২৫টি বি-টাইপ ও ১১টি সি-টাইপ প্লট রয়েছে। ওইসব প্লট ৪৪টি উদ্যোক্তাকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও ৭টি প্লট এখনও নির্মাণকাজ শেষ করতে না পারায় উৎপাদনে যেতে পারেনি।
Add Comment