ঝুঁকিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লা অংশ

মামশাদ কবীর, কুমিল্লা: ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার লাকসাম জংশন থেকে আখাউড়া জংশন এলাকা পর্যন্ত ডাবল লাইনের কাজ এগিয়ে চলেছে। কোথাও রেললাইন বসানো, কোথাও সেতু নির্মাণ, আবার কোনো কোনো স্থানে চলছে মাটি ভরাটের কাজ। আর এ মাটি আনা হচ্ছে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রেলপথের পাশের জমি থেকে। এতে রেলপথ ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, দেশের ব্যস্ততম প্রধান জাতীয় এ রেলপথটির কুমিল্লার লাকসাম জংশন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া জংশন পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার রেলপথের ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ম্যাক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান মাটি ভরাটের কাজ পায়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ডাবল লাইনের মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। প্রথমদিকে একটি চক্র কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতি পাহাড় কেটে মাটি সরবরাহ করে। পরবর্তীকালে বিষয়টি জানাজানি হলে বন্ধ হয় পাহাড় কাটা। এরপর গোমতী নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে উত্তোলিত বালি দিয়ে মাটি ভরাট করা হয়। পরবর্তীকালে বুড়িচং উপজেলার একাধিক স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পাশের জমিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন শুরু করে।
রেললাইনের অনেকটা কাছাকাছি হওয়ায় পাশাপাশি বেশ কিছু স্থানের মাটি ভেঙে পড়লে সাধারণ মানুষ বালি উত্তোলনের প্রতিবাদ করে। এ অবস্থায় বুড়িচং উপজেলা প্রশাসন প্রথমদিকে ড্রেজার বন্ধে চাপ প্রয়োগ করলেও একসময় অজ্ঞাত কারণে নীরব হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর রেলওয়ে স্টেশনের আড়াই কিলোমিটার দক্ষিণে রেললাইনের পূর্ব পাশে ১০০ মিটারের ভেতর নোয়াপাড়া এলাকায় একাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে রেললাইনের মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। একই অবস্থা রাজাপুর-রসুলপুর রেলস্টেশনের মাঝামাঝি কালিকাপুর এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবাদ করলেই জামায়াত-শিবির বা অন্য দলের কর্মী বানিয়ে গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছে মাটি ভরাটকারী সিন্ডিকেটের লোকজন। এছাড়া অনেককে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। এদিকে যে হারে রেললাইনের পাশের জমি থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে এ এলাকার জমির নিচের অংশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক স্থানে মাটি ধসে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। প্রশাসন বিষয়টি জানলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। একইভাবে রাজাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দুই কিলোমিটার দক্ষিণে খোদাইতলী গ্রামে রেলপথের পশ্চিম পাশে ড্রেজার বসিয়ে বালি ভরাটের কাজ করছে। সেখানেও মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। রেলপথের পাশে অনেক দিন ধরে বালি উত্তোলনের কাজ চললেও কেউ কিছু বললে মামলা বা হয়রানির হুমকি দেয়া হচ্ছে।
নোয়াপাড়া এলাকায় ড্রেজার পরিচালনার কাজে নিয়োজিত বরিশালের উজিরপুর এলাকার বিল্লাল ও লতিফ মিয়া জানান, বরিশাল থেকে অল্প ক’দিন হয় এসেছেন। এখানে চারটি ড্রেজারে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। এদিকে এ রেলপথের ব্রাহ্মণপাড়ার সীমানা ঘেঁষা সালদা এলাকায় ২৬২ নং সেতুর পূর্ব পাশ থেকেও বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। বিষয়টি জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন প্রকৌশলী জানান, যেভাবে রেলপথের কাছাকাছি থেকে ড্রেজারে বালি উত্তোলন হচ্ছে, এতে অবশ্যই ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ঝুঁকিতে রয়েছে। বালি উত্তোলনের ফলে যে কোনো সময় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
ডাবল লাইন নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের আর্থ ম্যানেজার জয়নাল আবেদীন জানান, রেলপথের প্রায় ২০০ মিটার দূর থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে রেলপথ কোনোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে বালি উত্তোলন হচ্ছে।
ম্যাক্সের জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানান, সব নিয়মনীতি মেনেই রেলপথের পাশ থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান জানান, তিনি সরেজমিন ঘুরে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০