ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়!

ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ বা রেন্টাল ও আইপিপির বিলও দিতে পারছে না পিডিবি। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাতে সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এজন্য বাধ্য হয়ে দেশি-বিদেশি ঋণের দিকে ঝুঁকছে পিডিবি। এ নিয়ে শেয়ার বিজের ধারাবাহিক আয়োজনের আজ থাকছে শেষ পর্ব

ইসমাইল আলী: দুই বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে। বিশেষ করে ২০২১-২২ অর্থবছর এ হার অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছায়। চলতি অর্থবছর তা আরও বেড়ে গেছে। জ্বালানির (গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস অয়েল) মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় দেড় বছরে প্রায় ৮১ শতাংশ। ফলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেও তা সামাল দেয়া যাচ্ছে না।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এতে বিদ্যুতের বাল্ক সরবরাহ মূল্য, বিক্রয় মূল্য ও ঘাটতির বিস্তারিত চিত্র উঠে এসেছে। চিঠির তথ্যমতে, মাত্র দেড় বছরে বিদ্যুতের বাল্ক সরবরাহ ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৮১ দশমিক ১৭ শতাংশ। তা সামাল দিতে তিন মাসে বাল্ক বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য দুই দফায় প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এরপরও ঘাটতি না কমে প্রায় চারগুণ হয়ে গেছে।

পিডিবির তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর বিদ্যুতের বাল্ক সরবরাহ মূল্য ছিল ছয় টাকা ৬৪ পয়সা। সে সময় বিদ্যুতের বাল্ক বিক্রয়মূল্য ছিল পাঁচ টাকা ১২ পয়সা। এতে প্রতি ইউনিট বাল্ক বিদ্যুৎ বিক্রিতে ঘাটতি ছিল এক টাকা ৫২ পয়সা। গত অর্থবছর তা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছর বিদ্যুতের বাল্ক মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯ টাকা ৪৪ পয়সা। সে সময় বাল্ক সরবরাহ মূল্যহার কিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা আট পয়সা। এতে ঘাটতি অনেক বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি ইউনিটে চার টাকা ৩৫ পয়সা।

চলতি অর্থবছর ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিদ্যুতের বাল্ক সরবরাহ মূল্য আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা তিন পয়সা। তবে ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে তা দুই দফা বাড়ানোর পর বিদ্যুতের বাল্ক মূল্য দাঁড়িয়েছে ছয় টাকা ৭০ পয়সা। এরপরও বিদ্যুতের বাল্ক সরবরাহ ও বিক্রয়মূল্যের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ টাকা ৩৩ পয়সা। এ ব্যবধান আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চিঠির তথ্যমতে, উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয়মূল্যের ব্যাপক ঘাটতি হওয়ায় বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ভর্তুকি ছাড় করছে না। বর্তমানে সাত মাসের ভর্তুকি বকেয়া পড়েছে প্রায় ২৭ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুনের বকেয়া তিন হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, জুলাইয়ের চার হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা, আগস্টের চার হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরের চার হাজার ৪৮০ কোটি টাকা, অক্টোবরের তিন হাজার ৮৬২ কোটি টাকা, নভেম্বরের তিন হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বরে দুই হাজার ৫২০ কোটি টাকা।

এদিকে ভর্তুকির অর্থ নিয়মিত ছাড় না হওয়ায় বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া রয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের বকেয়া বিল পাঁচ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, অক্টোবরের ছয় হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, নভেম্বরের পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, ডিসেম্বরের পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং চলতি বছরের জানুয়ারির পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় সরকারি এবং বেসরকারি (আইপিপি ও রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র বিপাকে পড়েছে। নিয়মিত জ্বালানি (তেল ও কয়লা) আমদানি করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি এলসি খুলতে বিপাকে পড়ছে এসব কোম্পানি। এতে বাধ্য হয়ে ভর্তুকির বিপরীতে ১০ হাজার কোটি টাকা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ নিতে চাইছে পিডিবি। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০