ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করবে সফটওয়্যার

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনো প্রতিষ্ঠান বা আমদানি-রপ্তানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি করেছে। আবার উচ্চমূল্যের পণ্য নি¤œ বা শূন্য ঘোষণা দিয়েছে। এইচএস কোড জালিয়াতি করেছে। অথবা কাগজপত্র জালিয়াতি করে আমদানি-রপ্তানি করছে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ককর ফাঁকি ও জালিয়াতির সুযোগ সীমিত বা বন্ধ করতে অডিটে জোর দিয়েছে এনবিআর। সেজন্য ‘কাস্টমস পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট ম্যানুয়াল-২০২৩’ প্রকাশ করা হয়েছে।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, আগে সিস্টেম বেইজড অডিট ছিল না। এই ম্যানুয়ালে সিস্টেম বেইজড অডিট চালু করা হয়েছে; যাতে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) প্রতিষ্ঠান অডিট করা যাবে। এছাড়া কমপ্লায়েন্স, বন্ডেড প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান অডিট করা যাবে। নতুন ম্যানুয়ালে কত দিনে অডিট শেষ করতে হবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, যা আগে ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের  ক্রাইটেরিয়া পদ্ধতি আগে সেভাবে ছিল না। এখন ক্রাইটেরিয়া দেয়া হয়েছে। আর প্রতিষ্ঠান সিলেক্টের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রিস্ক ম্যানেজমেন্টকে। আর অডিট বাস্তবায়ন করবে শুল্ক মূল্যায়ন কমিশনারেট। অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী শুল্ক মূল্যায়ন কাস্টম হাউস বা স্টেশনে তা নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা দেবে। ডব্লিউসিও’র গাইডলাইন অনুযায়ী আধুনিক এই অডিট ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়েছে।

যাতে বলা হয়েছে, রিস্ক ম্যানেজমেন্টের ভিত্তিতে অডিটের জন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসার সেবা বৃদ্ধির জন্য কাস্টম হাউস ও স্টেশনের আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে অডিটের জন্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কিছু বাছাই নীতি অনুসরণ করা জরুরি। অডিটের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাত ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা গেলে তা কাস্টম প্রশাসনের সীমিত সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময় অন্তর বা বছরে একবার অডিট করা সমীচীন। রাজস্ব ফাঁকি রোধে কার্যকর নিয়ন্ত্রণে অডিট কার্যক্রমের বিকল্প নেই। একইভাবে রাজস্ব ফাঁকি প্রবণ খাত চিহ্নিত করেও সীমিত সময় ও জনবলের ব্যবহারে সর্বোচ্চ সাফল্য আসতে পারে।

অডিটের জন্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান যেভাবে নির্বাচিত হবে

কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেট নিজস্ব রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা তথ্যের ভিত্তিতে পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিটের জন্য সূচক নির্ধারণের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান বা পণ্য চালান নির্বাচন করবে। রিস্ক ম্যানেজমেন্ট নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান সিস্টেম বেইজড পিসিএ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটে পাঠাবে।

 নির্বাচিত বিল অব এন্ট্রি বা চালান ট্রানজেকশন বেইজড পিসিএ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউস বা কমিশনারেটে পাঠাবে। শুল্ক মূল্যায়ন সব সিস্টেম বেইজড অডিট পরিচালনা করবে। তবে প্রয়োজনে কাস্টম হাউস, কমিশনারেট, কাস্টমস গোয়েন্দা থেকে কর্মকর্তা অডিট কমিটিতে রাখতে পারবে। অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউস। শুল্ক মূল্যায়ন ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান ছাড়াও কাস্টম হাউস সিস্টেম বেইজড অডিট ও পণ্য চালানের ক্ষেত্রে ট্রানজেকশন বেইজড অডিট করতে পারবে।

ট্রানজেকশন বেইজড অডিটে কোন আমদানি-রপ্তানিকারক পড়বে

একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো আমদানিকারক বা রপ্তানিকারকের মোট নথিভুক্ত ট্রানজেকশনের সংখ্যা ঝুঁকির উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে বলে অডিট নির্বাচনের ক্ষেত্রে একে একটি মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যেমনÑঅনিয়মিত আমদানি বা রপ্তানিকারক, প্রায়ই অসত্য ঘোষণা দেয় এমন আমদানি ও রপ্তানিকারক, একাধিক এইচএস কোডের পণ্য আমদানিকারক, কোনো পণ্যের এককালীন আমদানি ও রপ্তানিকারক, প্রথমবারের মতো আমদানি ও রপ্তানিকারক।

ট্রানজেকশনের ভ্যালু

কোনো আমদানি ও রপ্তানিকারক অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য বা নি¤œমূল্য বিশিষ্ট ট্রানজেকশন কম টিটিআই দিয়ে সম্পন্ন করে থাকলে অথবা তার বিপরীতে হয়ে থাকলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হবে। আবার উচ্চ বা নি¤œ উভয় কাস্টমস ডিউটির পণ্যের ট্রানজেকশনেই বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি থাকে। শূন্য রেটের পণ্যসমূহে সাধারণত রাজস্ব ফাঁকির ঝুঁকি বেশি না হলেও জালজালিয়াতির মাধ্যমে সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে অসত্য ক্লাসিফিকেশনের ঝুঁকি থেকেই যায়। যেহেতু উচ্চ শুল্কের পণ্যের ক্ষেত্রে যে কোনো ত্রুটি উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ক্ষতির কারণ হতে পারে। সে জন্য এগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে এ ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

সিস্টেম বেইজড অডিট (সিবিএ) নির্বাচন প্রক্রিয়া

রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ও শুল্ক মূল্যায়ন কমিশনারেটের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় কাস্টমস কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের (সিসিএস) মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান, অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) প্রতিষ্ঠান অডিটের জন্য বাছাই করা হবে। বাছাই প্রক্রিয়া ২৮ ধরনের নীতি অবলম্বন করা হবে।

 ট্রানজেকশন বেইজড অডিট শেষ করার সময়সীমা

অডিট সম্পাদন বা শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। ট্রানজেকশন বেইজড অডিট শেষ করতে ৩০ দিন সময় পাবে। এর মধ্যে অডিটের জন্য প্রস্তুতি নিতে পাঁচ দিন, নিরীক্ষা ২০ দিন (তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সরেজমিন পরিদর্শন) ও অডিট প্রতিবেদন প্রস্তুতে পাঁচ দিন সময় পাবেন। সে হিসেবে প্রতি মাসে একটি অডিট টিম সাধারণভাবে প্রতি মাসে এক বা একাধিক কার্যকর অডিট সম্পাদন বা শেষ করতে পারবে। তবে নিরীক্ষার ধরন ও গুরুত্ব বিবেচনায় সময় বাড়ানো-কমানো যাবে। সে ক্ষেত্রে কমিশনার বা মহাপরিচালক নিরীক্ষাধীন প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিধি ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে সময়সীমা পরিবর্তন করতে পারবেন।

সিস্টেম বেইজড অডিট শেষ করার সময়সীমা

সিস্টেম বেইজড অডিট ৯০ দিন বা তিন মাস সময় পাবে। এর মধ্যে অডিট টিমকে প্রস্তুতি নিতে পাঁচ দিন, অডিট শেষ করতে ৭৫ দিন ও অডিট প্রস্তুত করতে ১০ দিন সময় পাবেন। এ অনুসারে প্রতি মাসে একটি অডিট টিম সাধারণভাবে এক বা একাধিক কার্যকর অডিট শেষ করতে পারবে। তবে ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী কমিশনার বা মহাপরিচালক সময়সীমা পরিবর্তন করতে পারবেন।

ম্যানুয়ালে বলা হয়েছে, অডিট করতে হলে অডিট দলের সদস্যদের আইন, বিধি, এনবিআরের আদেশ, নির্দেশ, পরিপত্র, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট বিভাগের কাস্টমস-সংক্রান্ত বিচারাদেশের পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনা, এইচএস কোড, অরিজিন সম্পর্কে জানতে জবে। প্রতিষ্ঠানের অতীত কার্যক্রম, ফাঁকি বিষয়ে স্টাডি করতে হবে। অডিটের বিষয় জানিয়ে প্রতিষ্ঠানকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।

অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) অডিট

বাণিজ্য উদারীকরণ ও পণ্য খালাস প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে ডব্লিউটিও প্রণীত টিএফএ অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে উত্তম চর্চাকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য চালান কায়িক পরীক্ষণ ব্যতিরেকে সরাসরি খালাস প্রদানের জন্য এনবিআর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এইও হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে আসছে। বৈধ বাণিজ্যকে যতদূর সম্ভব অবাধে চলার অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আয়ের সুরক্ষা ও পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য কাস্টমস কন্ট্রোল পরিচালনা ও পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এইও প্রতিষ্ঠানের যেহেতু কোনো ধরনের কায়িক পরীক্ষা ছাড়াই পণ্য চালান খালাস প্রদান করা হয়। এছাড়া সেলফ অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় শুল্কায়ন হয়ে থাকে বিধায় এইও প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট করা হবে।

ম্যানুয়ালে বলা হয়েছে, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিটের মাধ্যমে কোনো পণ্য চালানের ক্ষেত্রে শুল্ককর অপরিশোধিত বা কম পরিশোধিত বা অন্য কোনো অনিয়ম উদ্ঘাটিত হলে তা কাস্টমস আইন ও বিধি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করতে হবে। কেবল শুল্ককর ফাঁকি ব্যতীত কোনো অনিয়ম বা অপরাধ উদ্ঘাটিত হলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। কোনো অনিয়ম বা শুল্ককর ফাঁকি উদ্ঘাটিত না হলে পিসিএ রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত ও আমদানি-রপ্তানিকারককে জানাতে হবে। পিসিএ হতে অতিরিক্ত শুল্ককর পরিশোধের তথ্য উদ্ঘাটিত হলে রিফান্ড প্রদান করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০