বরিশাল মহানগরীর ৩৪টি বহুতল ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলো ভেঙে ফেলতে তিন বছর আগে চিঠি দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। সেগুলো বহাল তবিয়তে রয়েছে। ভবন মালিকরা যেমন নোটিসে সাড়া দেননি, তেমনি সিটি করপোরেশনও সেগুলো ভাঙার উদ্যোগ নেয়নি। ভবনগুলোয় বাসরত কয়েকশ বাসিন্দা মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। গতকাল শেয়ার বিজে এ-সম্পর্কিত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানিয়েছেন, মালিকপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেগুলো ভেঙে ফেলা হবে। এতদিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা অবশ্য জানা যায়নি।
বছর তিনেক আগে দেওয়া নোটিস এখনও কার্যকর হয়নি, সেটিই যথেষ্ট বিস্ময়ের। এদেশে সবচেয়ে মূল্য কম হচ্ছে মানুষের জীবনের। তাছাড়া আইন-কানুনের প্রতি উদাসীনতা দেখানো আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সুশাসনের অন্তরায়। মালিকপক্ষের উচিত ছিল নোটিস পাওয়ার পরপরই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। ভবনগুলোর বাসিন্দাদেরও বিষয়টির প্রতি সচেতনতা প্রদর্শন করা প্রয়োজন ছিল, কারণ যে কোনো দুর্ঘটনার প্রাথমিক ভুক্তভোগী তারাই হবে।
বরিশালের খবরটি একটি উদাহরণ। এরকম অনেক ভবন দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। বিশেষত ঢাকা শহরে তো এরকম অনেক ভবন রয়েছে। তাছাড়া দেশের প্রতিটি উপজেলাতেই স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত বিদ্যালয়-ভবন রয়েছে, যেগুলো অবিলম্বে ভেঙে ফেলা দরকার। কিন্তু আমাদের দফতরগুলো এমনই হয়ে গেছে, কেবল ঘোষণা দেওয়াই সার! পরের কাজটুকু কে করবে, কীভাবে করবে সে বিষয়ে কারও ভাবনা নেই।
অথচ এগুলোর কারণে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাজার হাজার মানুষ মারা পড়তে পারে। এ ক্ষতি তো সহজে এড়ানো সম্ভব নয়! বাংলাদেশে এখন নিয়মিতই ঝড়ঝঞ্ঝা হচ্ছে, হচ্ছে ভূমিকম্পের মতো মারাত্মক দুর্যোগ। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেখানে ‘ভালো’ ভবনই হেলে পড়ে বা ভেঙে যায়, সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনগুলো যে সবার আগে ধ্বংস হবে তা বলাই বাহুল্য। তাহলে কি বলতে হবে, আমরা ইচ্ছে করেই মানুষ মারার যাবতীয় আয়োজন তৈরি করে রাখছি? একটি সভ্য রাষ্ট্রে এরকম চলতে পারে না, চলা উচিত নয়।
আমরা সংশ্লিষ্ট সব মহলকে অনুরোধ জানাতে চাই, মানুষের ন্যূনতম ক্ষতি হতে পারে এমন বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ বা পরিত্যক্ত ভবনের বিষয়ে নয়; বরং নতুন যেসব ভবন তৈরি হচ্ছে, সেগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে, তাও মনিটর করা প্রয়োজন। না হলে প্রতি বছর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা কেবল বাড়তে থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে যারা বাস করছেন, তাদের প্রতিও আহ্বান থাকবে এসব ভবনে বাস করা এড়ানোর। এগুলোয় বাস করে কিছু অর্থ হয়তো সাশ্রয় করা যায়, কিন্তু মনে রাখতে হবে জীবন অমূল্য।
Add Comment