মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পতনের পুঁজিবাজারে অধিকাংশ কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার এবং ইউনিট দর খুবই কম। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য সহজেই এসব শেয়ার বা ইউনিট বেছে নেওয়া যায়। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে কিছু শেয়ার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যদিও এর বেশিরভাগ ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটেগরির। তবে এ তালিকায় কিছু ‘এ’ ক্যাটেগরির কোম্পানিও রয়েছে।
মূল্য-আয় অনুপাতের (পিই-রেশিওর ভিত্তিতে) দিক দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের চারটিই ‘এ’ ক্যাটেগরির। সম্প্রতি ডিএসই থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ চার ‘এ’ ক্যাটেগরির কোম্পানি হচ্ছেÑমুন্নু জুট স্টাফলার্স, বঙ্গজ, জেমিনি সি ফুড ও সোনালী আঁশ।
তথ্যমতে, শেয়ারের পিই-রেশিওর বিবেচনায় এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষ ঝুঁকিতে রয়েছে মুন্নু জুট স্টাফলার্স। এ প্রতিষ্ঠানের মার্কেট পিই-রেশিও অবস্থান করছে ৫৪৩তে, বিনিয়োগ বিবেচনায় যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে জেমিনি সি ফুড। এ প্রতিষ্ঠানের পিই-রেশিও অবস্থান করছে ৩৬৪তে। তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানি বঙ্গজের পিই-রেশিও’র অবস্থান ২৮৬তে। আর সোনালী আঁশের শেয়ারের পিই-রেশিও অবস্থান করছে ২৩৯তে।
এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগ সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে যে কোনো সময়। রয়েছে পুঁজি হারানোর শঙ্কাও।
এদিকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকলেও বছরের অধিকাংশ সময়ই এসব শেয়ারদর বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। কোনো কারণ ছাড়াই বাড়তে থাকে এসব শেয়ারদর। স্টক এক্সচেঞ্জগুলো দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে নোটিস দিলে কোম্পানিগুলো গৎবাঁধা উত্তর দেয়: তাদের কাছে দর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। এ সময় কয়েক দিন শেয়ারদর কিছুটা কমলেও আবার তা আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রায় দুবছর ধরে দর বাড়ছে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারের। গত এক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ৫২৯ টাকা থেকে বেড়ে সাড়ে চার হাজার টাকায় চলে যায়। তখন কোম্পানির কাছে শেয়ারদর বৃদ্ধির সংবেদনশীল তথ্য জানতে চাইলে জানায়, তাদের কাছে দর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। যদিও পরে কোম্পানিটি বড় ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা করে। তবে বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিষ্ঠানটি যে হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, শেয়ারদর বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। তারা একে ‘কারসাজি’ বলে আখ্যায়িত করেন। সম্প্রতি আবারও বাড়তে শুরু করেছে এ কোম্পানির শেয়ারদর। বর্তমানে এ শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৮০১ টাকায়।
অন্যদিকে এ তালিকায় থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জেমিনি সি ফুডের শেয়ারদর ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও বর্তমানে কিছুটা কমে ১৮২ টাকায় অবস্থান করছে। যদিও গত বছর শেয়ারটি সর্বোচ্চ ৩১৪ টাকায় লেনদেন হয়। এ খাতের অন্য কোম্পানি বঙ্গজের শেয়ারদরও বছরের বেশিরভাগ সময় কারণ ছাড়াই হ্রাস-বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। একই অবস্থা সোনালী আঁশের।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কোম্পানি ‘এ’ ক্যাটেগরিতে থাকলেও এসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বছরের বেশিরভাগ সময় এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজির গুঞ্জন শোনা যায়। তারপরও অল্প দিনে পুঁজি দ্বিগুণ করার জন্য কিংবা ভালো মুনাফার আশায় এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন বিনিয়োগকারীরা। তাদের মনে রাখা দরকার, এ ধরনের শেয়ারে লাভের চেয়ে লোকসানের শঙ্কাই বেশি। তাই এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা বারবারই বিনিয়োগকারীদের অতিমূল্যায়িত ও ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে বিনিয়োগ করতে নিষেধ করি। তারপরও কিছু বিনিয়োগকারী কোনো ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। এভাবে বিনিয়োগ করে কিছু বিনিয়োগকারী লাভবান হলেও অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিষয়টি তাদের মাথায় রাখা উচিত।’