Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:42 am

ঝুঁকিবিহীন ও নিশ্চিত লভ্যাংশের জন্য বিনিয়োগ বাড়ছে ব্যাংকে 

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

গতবছর ব্যাংকগুলোর ডিপোজিট রেট অনেক কম ছিল। আর ডিপোজিট রেট কম থাকায় অনেকেই ব্যাংক খাতে না ঝুঁকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। এ বছর মুদ্রানীতি কঠোর হওয়াতে ব্যাংকগুলোর সুদের হার বেড়ে গেছে। ফলে অনেকেই পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে ঝুঁকিবিহীন ও নিশ্চিত লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় ব্যাংক খাতের দিকে ঝুঁকছেন, যার ফলে পুঁজিবাজার এখন নেতিবাচক ধারায় যাচ্ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচের আলোচনায় বিষয়টি উঠে আসে। অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এবং আইসিএবির সাবেক সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির, এফসিএ।

এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কিছু কারণে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমি মনে করি, কোনো কারণই খুব একটা যৌক্তিক ছিল না বাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য। মূলত কিছুটা অযৌক্তিক কারণেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে, যার ফলে সূচকের ঊর্ধ্বগতি স্তিমিত হয়ে ক্রমাগত নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যদিও গত ছয় মাসের পরিসংখ্যান লক্ষ করলে দেখা যাবে, এখন পর্যন্ত সূচকের কিন্তু খুব বেশি মাত্রার ধস নামেনি। তিনি আরও বলেন, বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, কারণ বিনিয়োগ না হলে তো আর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে না। দেশে এখন প্রতি বছর দুই মিলিয়ন কর্মক্ষম লোকের সৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু সে হারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হওয়ায় বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, বিশেষ করে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। কিন্তু জিডিপির আনুপাতিক হার হিসেবে দেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। গত আট-নয় বছরে এটি এক শতাংশের একটু বেশি বেড়েছে। তাই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের নজর দেওয়া দরকার।

মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ২০১৮ সাল দেশের জন্য নির্বাচনী বছর। নির্বাচনের বছরে তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদরা সব সময় বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম দুটি কাজের একটি হচ্ছে মুদ্রা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতিকে আওত্তে আনা। বাংলাদেশ ব্যাংক এবারের মুদ্রানীতিতে এডি রেশিও কমিয়ে দিয়ে পরে তার মেয়াদ ছয় মাস, আরও পরে ১২ মাস বাড়িয়ে দিয়ে কার্যত এটিকে তারা অকার্যকর করে দিয়েছে। আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বাজার তো প্রতিক্রিয়াশীল হবেই, কারণ আর্থিক বাজার খুব সংবেদনশীল। ক্যাপিটাল ও মানি মার্কেট এ দুটিকে উদ্দেশ করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। ফলে অবশ্যই এর একটি প্রতিফলন বাজারে আসবে। কারণ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত বা স্টেকহোল্ডাররা তো তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করে ফেলবেই। যার ফলে পুঁজিবাজার তার মাসুল গুনছে এখন। গতবার ডিপোজিট রেট অনেক কম ছিল। আর ডিপোজিট রেট কম থাকায় অবশ্যই কিছু ফান্ড পুঁজিবাজারে ঢুকেছে। বর্তমানে মুদ্রানীতি কঠোর হওয়ায় সুদের হার বেড়ে গেছে। ফলে অনেকেই হয়তো পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে  ঝুঁকিবিহীন ও নিশ্চিত লভ্যাংশ পওয়ার আশায় ব্যাংক খাতের দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে পুঁজিবাজার এখন নেতিবাচক ধারায় যাচ্ছে। কথা হচ্ছে, অনেকেই মনে করেন, বাজার পতনে এডি রেশিওর কোনো ভূমিকা নেই। যদি কোনো ভূমিকা নাই থাকত তাহলে নীতিমালা ঘোষণা করেও এডি রেশিওর মেয়াদ কেন আবার বাড়ানো হলো? তাছাড়া এটি নির্বাচন বছর এবং এর মধ্যে কিছু ঘটনাও ঘটে যাওয়াতে অনেকের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। এ কারণে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে নিয়েছে এবং নতুন করে বিনিয়োগে আসছে না এবং যারা আছে তারাও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে।

 

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম