Print Date & Time : 30 June 2025 Monday 11:17 pm

ঝুঁকির শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানিতে বাছবিচার ছাড়া বিনিয়োগ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: মৌলভিত্তির বিচারে ঝুঁকির শীর্ষে রয়েছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ভিত্তিও শক্ত নয়। বেশিরভাগ কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের দিতে পারছে না সন্তোষজনক লভ্যাংশ। কেউ-বা বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের বঞ্চিত করছে, কিন্তু তারপর বাড়ছে এসব শেয়ারের দর। কোনো বাছবিচার ছাড়াই এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন একশ্রেণির বিনিয়োগকারী, যা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বাজারবিশ্লেষকেরা।
শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিওর হিসাবে বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠান হচ্ছেÑকে অ্যান্ড কিউ, মুšুœ জুট স্টাফলার, শাইনপুকুর সিরামিক, মডার্ন ডায়িং, ইস্টার্ন কেব্ল, এপেক্স ফুড, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, এমবি ফার্মা ও সোনালী আঁশ।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে কে অ্যান্ড কিউ কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত অবস্থান করছে তিন হাজার ৩৯০-তে। ‘জেড’ ক্যাটোগরিতে অবস্থান করা এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বছরের বেশিরভাগ সময়ই ঊর্ধ্বমুখী থাকে। গত এক মাসের ব্যবধানে এই শেয়ারের দর বেড়েছে ২৬ শতাংশ। এক মাস আগে এ শেয়ারের দর ছিল ১৩৫ টাকা। বর্তমানে সেই শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১৭০ টাকায়।
অন্যদিকে মুšুœ জুট স্টাফলারের শেয়ারের দর এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। এক মাস আগে এর প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল এক হাজার ১৮৭ টাকা। সর্বশেষ যা লেনদেন হয় এক হাজার ৬৫১ টাকায়। বর্তমানে এই শেয়ারের পিইরেশিও অবস্থান করছে দুই হাজার ৮৯৫-তে। প্রায় সারা বছরই কোনো কারণ ছাড়াই এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বৃদ্ধির দাপট দেখা যায়। একইভাবে এক হাজার ২৪০-এ অবস্থান করছে মুন্নু সিরামিকের শেয়ারের পিই রেশিও। বর্তমানে এ শেয়ারের দর কিছুটা নি¤œমুখী হলেও বছরজুড়েই এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বৃদ্ধির দাপট দেখা গেছে। বছরের ব্যবধানে শেয়ারের দর ৩৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৬২ টাকায় কেনাবেচা হয়।
এদিকে বর্তমানে শাইনপুকুর সিরামিকের পিই-রেশিও ৩১১। ঝুঁকিপূর্ণ হয়েও বছরের বেশিরভাগ সময়ই ঊর্ধ্বমুখী থাকছে এ শেয়ারের দর। গত এক বছরের ব্যবধানে এ শেয়ারের দর ১০ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ২২ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়।
১৭২ পিই-রেশিও নিয়ে দর বৃদ্ধির দৌড়ে বেশিরভাগ সময় এগিয়ে থাকে মডার্ন ডায়িং কোম্পানি। উৎপাদন বন্ধ থাকা এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার গত এক বছরের মধ্যে ১৭২ টাকা থেকে ২৯৬ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। একই অবস্থা ইস্টার্ন কেব্লসের। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত ১৪৫। এই পিই-রেশিও নিয়ে এক বছরের মধ্যে এ শেয়ার ১৩৩ থেকে বেড়ে ২৫৪ টাকায় কেনাবেচা হয়।
অন্যদিকে এপেক্স ফুডের বর্তমান পিই-রেশিও ১৭৪ দশমিক ৫৫। এছাড়া রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের পিই ১৪৩, এমবি ফার্মার ১৪১ ও সোনালী আঁশের পিই-রেশিও অবস্থান করছে ১৮৭-তে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ পিই-রেশিও নিয়ে কারণ ছাড়া দর বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে সবসময় আলোচনায় থাকে এসব কোম্পানি।
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে সোনালী আঁশের কোম্পানি সচিব মাকসুদুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। কিন্তু তার পরও মাঝেমধ্যেই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী থাকে। কিছুদিন আগেও ডিএসই আমাদের কাছে দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েছে। জবাবে আমরা জানিয়েছি সংবেদনশীল তথ্য না থাকার কথা। শেয়ারের দর কারা বাড়াচ্ছে বা কমাচ্ছে তা আমাদের জানা থাকে না।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, সচেতন বিনিয়োগকারীর কাজ হচ্ছে ঝুঁকিহীন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা। পুঁজি নিরাপদে রাখতে হলে এর বিকল্প হতে পারে না।