Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 12:10 am

ঝুঁকি নিয়েই ক্যাম্পাসে ফিরছেন রাবি শিক্ষার্থীরা

 আবু সাঈদ সজল, রাবি: কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে গত ১২ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বন্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাস খোলার আভাস পাওয়া গেলেও করোনার প্রকোপ বাড়ায় তা আর হয়ে ওঠেনি। বরং দফায় দফায় ছুটি বেড়ে সর্বশেষ ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঠেকেছে।

এদিকে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অবস্থান করায় বাড়ছে হতাশা। অর্থিক সংকট ও টিউশনি চলে যাওয়ার শঙ্কা এবং টানা পাঁচ মাস বাসায় থেকে বিরক্তবোধ কাজ করায় অনেক শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়েই চলে এসেছেন রাজশাহী। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকায় শহর ও ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসে অবস্থান করছেন তারা।

এমনই একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিপন মাহমুদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে কবে ক্যাম্পাস খুলবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা বলা মুশকিল। এই কঠিন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বাড়িতে অবস্থান করায় স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনায় একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এই গ্যাপ থেকে কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, সে চিন্তাতেই রাজশাহী ফেরা। 

তিনি আরও বলেন, হোম টিউশনি নতুনভাবে শুরু করাও ক্যাম্পাসে ফেরার অন্যতম কারণ। তাছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর করোনাকালে আর্থিক সংকট আর টিউশনি চলে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকটাই বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস খোলার আগেই রাজশাহীতে অবস্থান করছেন অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, কভিড-১৯-এর কারণে পরিবারের অনেক সদস্য বেকার, তাই উপার্জনও নেই। আর্থিক টানাপড়েনের কারণে নিজের ব্যক্তিগত খরচ চালানোও অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাদের। এ কারণে পরিবারে বোঝা হয়ে না থেকে করোনা দুর্যোগেই টিউশনি করতে হচ্ছে তাদের। অনেক শিক্ষার্থীই একই কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ক্যাম্পাস-পার্শ্ববর্তী মেসগুলোয় উঠছেন বলে তিনি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্যাম্পাস-পার্শ্ববর্তী মেস অথবা রাজশাহীতে ফিরেছেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালান। অনেকে আবার টিউশনি করিয়ে নিজ খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাবেদুল ইসলাম মনি। টিউশনি কিংবা কোনো কাজ না থাকলেও তিনি ক্যাম্পাস-পার্শ্ববর্তী মেসে উঠেছেন। দীর্ঘ সময় বাড়িতে থাকায় মানসিক অবসাদ তৈরি হয়েছিল তার। তাই তিনি ফিরে এসেছেন বলে জানান। তাছাড়া স্নাতক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াও তার প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, বাসায় থেকে পড়াশোনা খুব একটা হচ্ছিল না। তাই শহরের দিকে এসেছি, যাতে পড়াশোনা করা যায়।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল ফাত্তাহ রাফিও একই সুরে বলেন, দীর্ঘ পাঁচ মাস বাড়িতে থাকায় একঘেয়ে ভাব চলে এসেছে। একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। অফিস-আদালত কোনো কিছুই বন্ধ নেই, অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরতে হলো।

রাবির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস আডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) শিক্ষার্থী আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি নিজের ইচ্ছায় ক্যাম্পাসে এসেছি। বিশেষ করে পড়াশোনা ধরে রাখার জন্য। আর অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফিরছে আর্থিক সমস্যার কারণে বাসা বা মেস ছেড়ে দিতে। অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট উইপোকায় খেয়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সেগুলো নিতে এসেছে।

করোনা দুর্যোগে চরম বিপাকে পড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের জন্য ইন্টারনেট ক্রয়ের সামর্থ্য নেই বলেও জানান। লকডাউনে পরিবারের উপার্জন কমে যাওয়ায় পরিবার থেকে সাপোর্টও পাচ্ছেন না তারা। অনলাইন ক্লাসে বিঘ্ন ঘটায় রাজশাহী ফিরছেন বলেও তারা জানান।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় ইন্টারনেটের অবস্থা নাজুক। গ্রাম থেকে দূরের বাজারে গিয়ে ক্লাস করতে হয়। ইন্টারনেট কানেকশন কখনও টুজি আবার কখনও থ্রিজি হয়। আবার কখনও কানেকশনই চলে যায়। গ্রাম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্ট এসবে অংশ নিতে না পারায় রাজশাহী চলে এসেছেন বলে জানান তারা।